কানাইয়ের ভিজা কাপড় বদলাইয়া নিজের একটা শাড়ী দিয়া সে তাকে ঢাকিয়া দিল। গাছের পাতা আর মাচানের ছাউনি এখানে জ্যোস্নাকে আড়াল করিয়াছে,—মাচান অন্ধকার।
‘কি হইছে মামা? নড়ন চড়ন নাই যে?’
ভৈরব বলিল,—‘কি হইছে সে তো তুই জানিস—আমরা কি করে বলব?’
মহিম বলিল—‘হবে আবার কি, ঠেসে মদ গিলেছে, এখন জ্ঞান নেই।’
আলতামণি কাঁদ কাঁদ গলায় বলিল, ‘ফিরে এসে কি সব আবোলতাবোল বকতে বকতে মই বেয়ে উঠছিল মামা, হঠাৎ কি হ’ল পড়ে গেল নীচে। ভেসেই যেত চলে, মাচান থেকে ঝাঁপ দিয়ে ধরেছি। তখন চেতনা ছিল না মামা—অমন হঠাৎ চেতন লোপ পেল কেন মামা? বড় ডর লাগে মামা, গা কাঁপছে মোর—হা দ্যাখো—’
গা কাঁপিতেছে কিনা না দেখিয়াই তাকে ঠেলিয়া দিয়া ভৈরব বলিল, ‘দেখেছি বাবু, দেখেছি। বক বক না করে মাথায় হাওয়া কর, আপন থেকে চেতন আসবে। বেশী গিললে অমন হয়।’
হাওয়া করার কথাটা খেয়াল ছিল না, হাতড়াইয়া হাতড়াইয়া আলতামণি পাখা খুঁজিয়া বাহির করিল, তারপর কানাইএর মাথায় জোরে জোরে বাস করিতে লাগিল।
ভৈরব বলিল, ‘আস্তে আস্তে হাওয়া কর, অত জোরে লোকে হাওয়া করে না কি?’
‘না মামা, জোরে জোরে করি, শীগ্গির চেতন হবে।’
‘যেমন মুখ্যু তুই,—আস্তে হাওয়া দিলে বেশী কাজ দেয়। তিনবার আমায় মারলি পাখা দিয়ে, পাখা রাখ, আঁচল দিয়ে হাওয়া দে।’