পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১
বন্যা

 মাচানে উঠিবার বাঁশের মইটা কানাই মন্দ করে নাই, গাছের সঙ্গে বাঁধিয়া দিয়াছে শক্ত করিয়া। এদিক দিয়া বজ্জাতটার গুণ আছে অনেক,—যা’ করে ভাল করিয়াই করে। কত তাড়াতাড়ি মাচান বাঁধিয়াছে, হাতের কাছে যা কিছু উপাদান পাইয়াছে তাই লাগাইয়াছে কাজে, তবু মাচানটি যেন দারুণ বিপদে ক’দিনের জন্য নিরুপায়ের আশ্রয় নয়, বা উপভােগ করিবার আরামের ব্যবস্থা। উপরে ছাউনিটা পর্যন্ত এমনভাবে করিয়াছে যেন বহুকাল রােদ বৃষ্টি ঠেকাইবার জন্য ছাউনিটার দরকার হইবে।

 ক্ষীণ চাঁদের আবছা আলােয় বাঁশের মই বাহিয়া শবের মত একটা নিশ্চেষ্ট শিথিল দেহ মাচানে তোলা সহজ ব্যাপার নয়। দূর সম্পর্কের দুই মামার অকথ্য গালাগালিতে আলতামণির শ্রবণ-যন্ত্র দু’টি যে একেবারে বিকল হইয়া গেল না, সে এক রহস্যময় ধর্ম্ম বটে মানুষের ইন্দ্রিয়ের। আলতামণির আর্ত্ত্তনাদে সাধে কেউ সাড়া দেয় না। তার প্রত্যেকটি আর্তনাদ শেষ পর্যন্তু এমনিভাবে মানুষকে হাঙ্গামায় ফেলে, প্রাণান্ত করিয়া ছাড়ে। বৈশাখের প্রথমে মাঝরাত্রে সে একবার এইরকম আর্ত্তনাদ করিয়াছিল,—ঘরে তার আগুন লাগিয়াছে! কেন লাগিয়াছে? নদীর মােটে তিন মাইল দূরে এই গ্রামে বৈশাখ মাসে জলের জন্য মানুষের যেমন পিপাসা জাগে তীব্র, নারীবহুল এই দেশে আলতামণির জন্য কয়েকটা মানুষের তেমনি কামনা জাগিয়াছিল বলিয়া। আলতামণিকে না পাইলে আলতামণির ঘরে আগুন দিতে হয়, এমন হিংস্র সেই কামনা।

 মাচার একপাশে কানাইকে ফেলিয়া দিয়া মহিম ও ভৈরব ধপ করিয়া বসিয়া পড়িল। আলতামণি কানাইকে উপরে তুলিতে তাদের সাহায্য করিতে পারে নাই, সেটা সম্ভব ছিল না। এখন তাড়াতাড়ি