পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সরীসৃপ
৩৬

পড়েনি। লম্বাও আবার এক অদ্ভুত রকমের। দেহের দীর্ঘ কাঠামোর সঙ্গে খাপ খেতে প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও যেন লম্বাটে হয়ে গেছে। বাহু দুটি অস্বাভাবিক রকম দীর্ঘ, দুদিক চাপা ফজলি আমের মত লম্বাটে মুখে খাঁড়ার মত নাক, চিবুকটা ঠেলে নেমে ডগার দিকে চোখা হয়ে গেছে, মাথার চুলও মেয়েলি ধরণে বড় বড়—ঠিক বাবরি নয়। গায়ের কোটটা পর্য্যন্ত বালিশের ওয়াড়ের মত সরু আর দীর্ঘ। দোর থেকে তিনবার পা ফেলেই রোয়াকে পৌঁছল। নীচু হয়ে আমার মুখের কাছে মুখ এনে নিরীক্ষণ ক’রে বলল, তুমি কে হে?

 মুখে তামাকের দুর্গন্ধ, দাঁতগুলি কালো। আমি মুখ সরিয়ে নিয়ে বললাম, আমি সুরেশ।

 সুরেশ নাকি? বেশ দাদা বেশ। তা আমার বাড়ীতে হঠাৎ সুরেশের আমদানি কি জন্য? এ বাড়ীতে সুরের রেশটুকুও যে নেই দাদা? ওর জন্য নাকি?

 মমতাদি বলল, এসব কি বলছ ছেলেমানুষকে? আমি ওদের বাড়ী কাজ করি, ওকে আমি ডেকে এনেছি। ওকে ভয় দেখাচ্ছ কেন?

 নগেন চট ক’রে সোজা হয়ে গেল, ভয় দেখাচ্ছি? বড় যে লম্বা চওড়া কথা শিখেছ! আমি ভূত নাকি যে ভয় দেখাব?

 মমতাদি কথা না ক’য়ে মসলা বাটতে লাগল। নগেন লম্বা কোটের পকেট থেকে একটা বিড়ি বার ক’রে ধরাল। আচমকা নীচু হয়ে আমার মুখে ধোঁয়া ছেড়ে হ্যা হ্যা ক’রে হাঁপানির মত হাসল। বিড়ির কড়া ধোঁয়ায় আমি কেশে ফেল্‌লাম।

 ছি! ওকি কর? ব’লে মমতাদি শিল ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।

 নগেন ফের ছিলে-ছেঁড়া ধনুকের মত সোজা হয়ে গেল, তুমি ফোঁড়ন