পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

2† সময় বইছে, সময়ের টানে । তিন মাস, অথাৎ গাণিতিক হিসেবে মাত্র ৯০ দিন জীবনের পক্ষে এত তুচ্ছ সময়, এত ক্ষুদ্র পরিসব, ভাবলে হয়তো কিছুই নয় । কিন্তু রাবেয়া এবং আমার জীবনে এই ৯০টা দিন নানাবিধ আবেগের আবর্তে টেনশনে সরোষে ক্ষীপ্ত হয়ে ফুলে ফুলে উঠছে। আরো একদিন । দুপুর বেলা । ছুটির দিন। পাশের ঘরে রাবেয়া । আমি এ ঘরে । হঠাৎ চোরের মতো উঠে গিয়ে দেখি, রাবেয়া সেই ফোটোটি হাতে ধরে উদাস হয়ে বসে আছে। লজ্জা পাবে ভেবে ফিরে এলাম নিঃশব্দে চুপি চুপি, রাবেয়া টের পেল না । আরো এক ঘণ্টা পর আবার গেলাম । রাবেয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। চোখে কান্নার বিন্দু, চোখের কোণে জমে আছে । বালিশের তলায় হাত ঢুকাতেই রাবেয়া নড়ে উঠল। আবার ভয়ে ফিরে এলাম ৭ এবং নিজের এই আচরণে নিজেই কেমন সংকুচিত হয়ে গেছি। হামিদুলকে রাবেয়ার মনে পড়াই তো স্বাভাবিক, কিন্তু তার মনের এই দুঃখবোধকে সংগত মনে করে চুপ করে থাকলেই তো পারি, কেন অযথা অস্থির হই ? আমার মধ্যে কি কোনো ক্ষুদ্র ঈষা জেগে উঠছে ? পরের দিন এই কথা ভাবতে ভাবতে কলেজ গেলাম । কলেজে মন টেকে না, কোথায় যেন পালিয়ে গিয়ে নিরালায় বসে থাকতে ইচ্ছে করে । বয়ঃসন্ধির উগ্ৰ প্রেমিকের নেশার মতো তরল ভাবাবেগ তাড়া দিয়ে ফেরে । ঠিক একটি স্বপ্নবেষ্টিত কাল্পনিক স্বাধীন ভূখণ্ড আবিষ্কার করি মনে মনে । যেখানে হারিয়ে গেলে কোনো বাধা থাকে না । পায়ে পায়ে শেকলে টান ধরে না । মোল্লাগাজী হাজী মৌলানা পীরজাদা কারো কোনো কুটিল ভুকুটি নেই। হাদিস মছলার ফতোয় যে পৃথিবীকে পঙ্কিল করেনি। বাস্তবকে মোকাবিলা করার যখন কোনোই পথ থাকে না, তখনই সে স্বপ্লিল ভূখণ্ড জলের তথা থেকে মাটির আন্তরণে আভাষিত হতে থাকে । সমাজের বাধনিষেধে চাপা পড়ে ভেঙে যাওয়া ব্যক্তির মন এইভাবে স্বপ্নের রাজ্যে পালাবার পথ খোঁজে । তবে কি আমি হেরে যাচ্ছি ? একটিমাত্র ক্লাশ নেবার পর কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। পথে । কলেজ ক্যান্টিনে ভিড় দেখে সেদিকে গেলাম না । বুড়া রসিদ রিকশা-অলাকে পথে পেয়ে গেলাম । মন খারাপ থাকলে বুড়া রিকশা-অলাকে আমার ভালো লাগে । “Ay