করাও তথৈবচ। আর তৃতীয় সর্ত্ত পালন করিতে হইলেই যে অর্থদণ্ড প্রদান করিতে হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই; কারণ বিনা শুক্লে বাণিজ্য করিতে হইলেই কিঞ্চিৎ গোলযোগ ঘটিয়া থাকে।[১]
ইংরাজেরা যে মুচলিকা পালন করিবেন না, সে কথা অল্পদিনের মধ্যেই সিরাজদ্দৌলার কর্ণগোচর হইল। তিনি ইংরাজের কুটিল কৌশলের পরিচয় পাইয়া জ্বলিয়া উঠিলেন। ইঁহারাই না বলিয়াছিলেন যে, নবাবের অভিপ্রায় কি, তাহাই অবগত হইতে যাহা কিছু অপেক্ষা? ইঁহারাই না মুচলিকা পালন করিবেন বলিয়া বিবি ওয়াট্সের নয়নকজ্জলে ইংরাজ বন্দীর মুক্তিপত্র লিখাইয়া লইয়াছিলেন? সিরাজদ্দৌলা অনেক সহ্য করিয়াছেন; আর সহ্য করিতে পারিলেন না;—ইহাই তাঁহার সর্ব্বপ্রধান অপরাধ! তাঁহার রোষকষায়িত নয়নযুগল হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইতে লাগিল। মাতামহের অন্তিম উপদেশ স্মৃতিপটে অনল-অক্ষরে জ্বলিয়া উঠিল।[২] সুতরাং সিরাজদ্দৌলা আর আলস্যে কালক্ষয় না করিয়া, কলিকাতায় দূত পাঠাইয়া দিয়া স্বয়ং সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রার অয়োজন করিতে লাগিলেন।
সিরাজদ্দৌলা পদে পদে অপমানিত হইয়া যেরূপ উত্যক্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ করিলে, কলিকাতা আক্রমণের জন্য তাঁহাকে ভর্ৎসনা করা যায় না। কিন্তু কলিকাতা আক্রমণই তাঁহার কাল হইল। তিনি যদি ইংরাজ-শক্তির সহিত সংঘর্ষ উপস্থিত না করিতেন, তাহা হইলে তাঁহার ইতিহাস কিরূপ আকার ধারণ করিত, তাহা কেহ বলিতে