একে নিশাকাল, তাহাতে নিদারুণ শীত। সকলেই নিঃশব্দ নিঝুম। সেই নৈশ নীরবতা আলোড়ন করিয়া ইংরাজের কামান গুলি ভীম কলরবে গর্জ্জন করিয়া উঠিল! গুড়ুম-গুড়ুম— গুম্; গুড়ুম—গুড়ুম-গুম, গুড়ুম-গুড়ুম-গুম্;—ইংরাজের কামান ঘন ঘন ডাকিতে লাগিল, গুড়ুম-গুড়ুম-গুম্। সহসা সুপ্তোত্থিত হইয়া সিপাহীসেনা কামান গর্জ্জনের কারণ বুঝিতে পারিল না! তাহারা তুমুল কোলাহলে নবাব-শিবির আকুল করিয়া তুলিল; এবং যে যেখানে ছিল, হাতিয়ার বাঁধিয়া, মশাল জ্বালাইয়া, কামানের নিকটে দাঁড়াইতে লাগিল। তখন নবাব-শিবিরের কামানগুলিও প্রচণ্ড বিক্রমে অনলবর্ষণ করিতে ক্রটি করিল না!
সিরাজদ্দৌল্লা গাত্রোথান করিলেন। প্রভাত হইলেও ভাল করিয়া দৃষ্টিসঞ্চালনের উপায় হইল না;—ঘন ঘনাকারে ধূমপুঞ্জ দিঙ্মণ্ডল আবরণ করিয়া ফেলিয়াছে, তাহার উপর কুজ্ঝটিকায় চারিদিক্ সমাচ্ছন্ন; নিকটে কি দূরে কোনদিকেই নয়নসঞ্চালনের সুবিধা নাই। কেবল থাকিয়া থাকিয়া উভয় পক্ষের কামানগুলি কড়্ কড়্ করিয়া উঠিতেছে; আর মধ্যে মধ্যে আহতের আর্ত্তনাদে চারিদিক আকুল করিয়া তুলিতেছে! সকলেই বুঝিল যে, লড়াই বাধিয়াছে;—কিন্তু সহসা লড়াই বাধিবার কারণ কি, সে কথা কেহই বুঝাইতে পারিল না।
৭টা বাজিয়া গেল। তথাপি সেই কুজ্ঝটিকা, তথাপি সেই ধূমপুঞ্জ, তথাপি সেই কামানগর্জ্জন। কে কোথায় ছিটাইয়া পড়িয়াছে;—শত্রু নিকটে কি দূরে, কিছুই বুঝা যাইতেছে না; কেবল শব্দ লক্ষ্য করিয়া মুসলমানেরা কামানে অগ্নিসংযোগ করিতেছে, আর প্রদীপ্ত লৌহপিণ্ডরাশি তীব্রতেজে ছুটিয়া বাহির হইতেছে। যখন দিবালোক প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিল, তখন সকলেই সবিস্ময়ে চাহিয়া দেখিলেন যে, ক্লাইবের সমর-পিপাসা শান্ত