রণযাত্রা, ফৌজদারের সযত্ন-পালিত তুষ্ণীম্ভাব, চন্দননগরে দেড়শত মাত্র গোরার অবস্থান,—এই সকল বিষয় একত্র বিচার করিলে মনে হয় যে, মুর্শিদাবাদের গুপ্তমন্ত্রণা হয়ত হুগলীর ফৌজদারকে ও কর্ত্তব্যভ্রষ্ট করিয়াছিল!
এদিকে বিদ্রোহের সন্ধান পাইয়া, মীরজাফরকে কারারুদ্ধ করিবার সংকল্প পরিত্যাগ করিয়া, সিরাজদ্দৌলা তাঁহাকে স্বপক্ষে টানিয়া আনিবার আয়োজন করিতে লাগিলেন। অনেকে বলেন যে, সিরাজদ্দৌলার কাপুরুষত্বের ইহাই উৎকৃষ্ট নিদর্শন।[১] কিন্তু সে সময়ে মীরজাফরের সঙ্গে শক্তিপরীক্ষা করিতে বসিলে, মুর্শিদাবাদেই পলাশির যুদ্ধাভিনয় সুসম্পন্ন হইত। সিরাজদ্দৌলা স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ব্যাকুল; সুতরাং কেহ কেহ মীরজাফরকে কারারুদ্ধ করিবার জন্য উত্তেজনা করিলেও সিরাজদ্দৌলা সে কথায় কর্ণপাত করিলেন না। তিনি মীরজাফরের সকল অপরাধ ক্ষমা করিয়া রাজসদনে আহ্বান করিয়া পাঠাইলেন। সিরাজদ্দৌলা ভাবিয়াছিলেন যে, ইস্লামের নামে, আলিবর্দ্দির নামে, স্বাধীনতা রক্ষার্থ সকল কথা বুঝাইয়া বলিতে পারিলে, হয়ত এখনও মীরজাফরের মতিভ্রম দূর হইতে পারে! বিদ্রোহী দল সিরাজদ্দৌলাকে বিলক্ষণ ভয় করিতেন। তাঁহারা দেখিলেন যে, সকল কথা প্রকাশ হইয়া গিয়াছে, সুতরাং নবাবের সঙ্গে পুনরায় সখ্যসংস্থাপন করাই সুপরামর্শ। তাঁহারা সেইরূপ উপদেশ দিতে ত্রুটি করিলেন না, কিন্তু মীরজাফরের সাহসে কুলাইল না;—তিনি আর রাজসদনে উপস্থিত হইলেন না![২]