পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই বিনয় সবিস্ময়ে চেয়ে দেখে, মায়া, অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে তাকে ডাকছে। বেশ বেলা যে হয়ে গেছে চারিদিকের তীব্র রোদ-র তারই বিজ্ঞাপন। কালকের দুর্ঘটনার জন্যে তার ঘুম আসতে বেশ দেরী হয়েছিল, সুতরাং বেলায় যে ঘুম ভাঙরে এটা জানা কথা, কিন্তু সেজন্যে মায়ার এত ব্যস্ত হবার কোন কারণ নেই; তবু একটা ‘কারণ' মনে মনে সন্দেহ করে বিনয় পুলকিত হল। মৃদু হেসে বলল: দাড়াও, উঠছি—তুমি যে একেবারে ঘোড়ায় জিন লাগিয়ে এসেছ দেখছি।
উঃ, কী কুঁড়ে আপনি, আপনাকে নিয়ে আর পারা গেল না দেখছি, এদিকে কী ভয়ানক কাণ্ড ঘটে গেছে তা তো জানেন না—
বিনয় কৃত্রিম গাম্ভীর্য ও বিস্ময়ের ভান করে বলল: বটে? কী রকম?
মায়া এক নিশ্বাসে বলে গেল: যশোদা কাকীমা কাল রাত্তিরে হাসপাতালে মারা গেছে, আর আজ সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে দেখে, হারু কাকা, নীলু কাক গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে।
প্রচণ্ড বিস্ময়ের বিদ্যুৎ-তাড়নায় বিনয় এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াল: এ্যাঁঁ, বল কি?
তারপর দ্রুত হাতে এ, আর, পি,—র নীল কোর্তাটা গায়ে চড়িয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়াল। অগণিত কৌতুহলী জনতা উঠোন-বারান্দা ভরিয়ে, তুলেছে। পুলিশ, জমাদার, ইন্সস্পেক্টরের অপ্রতিহত প্রতাপ। তারই মধ্যে দিয়ে বিনয় চেয়ে দেখল, হারু ঘোষ বারান্দায় আর নীলু ঘোষ ঘরে দারিদ্র ও বুভুক্ষকে চিরকালের মতো ব্যঙ্গ করে বীভৎস ভাবে ঝুলছে, যেন জিভ ভেঙচাচ্ছে আসন্ন দুর্ভিক্ষকে।
বিপুল জনতা আর ঐ অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে বিনয় বস্তি ছেড়ে বড় রাস্তায় এসে দাড়াল, আপন মনে পথ চলতে সুরু করল, ভাবতে লাগল; ছুর্ভিক্ষ যে লেগেছে তার সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত কি এই