পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ধুলা সবসুদ্ধ টেনে তোলে। সেই কয়লা ধুলাসুদ্ধ ময়লা বাতাসের স্রোতকে আমরা বলি ধোঁয়া।

 এইরকম হালকা ধোঁয়াকে পাতলা থলির মধ্যে পুরে আমরা তাকে আকাশে ওড়াই-আর সেই কাগজের থলিকে বলি ফানুষ। সেই ফানুষ যদি খুব বড়ো হয়, আর মজবুত করে তৈরি হয়, তখন তাকে বলি ‘বেলুন'।

 এ তো গেল হালকা জিনিসের কথা। কিন্তু বাতাসের চাইতে ভারি জিনিসও অনেক সময় আকাশে ওঠে—যেমন ঘুড়ি। চলন্ত বাতাসের কেমন একটা ধাক্কা দিবার শক্তি আছে, সে বড়ো-বড়ো ভারী জিনিসকেও ঠেলে তোলে। ঘূর্ণী বায়ুর সময়ে বাতাসের জোর যখন খুব বেড়ে ওঠে তখন তার ধাক্কায় ঘরবাড়ি পর্যন্ত উড়িয়ে নেয়। ঘুড়ির সূতায় যতক্ষণ টান থাকে ততক্ষণ আপনা হতেই বাতাসের ধাক্কায় ঘুড়িকে উপর দিকে ঠেলে রাখে, কিন্তু বাতাস যখন থেমে আসে তখন ঘুড়ির সুতো ধরে ক্রমাগত টান না দিলে সে বাতাসের ধাক্কাও পায় না, কাজেই তার উপর ভর করে উঠতেও পারে না।

 ফানুষকে বাড়িয়ে যেমন প্রকাণ্ড বেলনের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি সাধারণ ঘুড়ির ‘পরিবতিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ' হচ্ছে মানুষ তোলা ধাউস ঘুড়ি। এরোপ্লেনের সৃষ্টি হবার আগে লোকে এইরকম ঘুড়িতে চড়ে নানারকম পরীক্ষা করে দেখেছে। এরকম করে শত্রুর চালচলন দেখবার জন্য নানারকম ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এর অসুবিধা এই যে বাতাসের জোর না থাকলে কিছু করবার উপায় নাই। তা ছাড়া, ঘুড়ি মাত্রেই এক জায়গায় আটকা থাকে, তার পক্ষে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব নয়। সুতরাং ঘুড়িই বলো আর ফানুষই বলো, সকলেই বাতাসের খেয়ালের অধীন।

 মানুষ অনেককাল হতেই চায়, পাখির মতো আকাশে উড়তে। কেবল ফানুষে চড়ে বা ঘুড়িতে উঠে হাওয়ার ঠেলায় ভেসে বেড়িয়ে তার মন উঠে না। পাখির নকল করে বড়ো-বড়ো ডানা বানিয়ে তার সাহায্যে উড়ে বেড়াবার চেষ্টা অনেকদিন হতেই চলে আসছে। হাতে পিঠে ডানা লাগিয়ে লোকে সাহস করে পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়েছে—আর তাতে কতজনের প্রাণও গিয়েছে। লিলিয়েন্থ প্রভৃতি যাঁরা এই বিষয়ে বেশ কৃতকার্য হয়েছিলেন তাঁরাও অতিরিক্ত সাহস করতে গিয়ে শেষে মারা পড়েন। তবু লোকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করতে ছাড়ে নি। পরীক্ষার ফলে মোটের উপর এইটুকু বোঝা গেছে যে পাখির মতো ডানা ঝাপটিয়ে ওড়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, তবে বাতাস ভালো থাকলে একটু উঁচু জায়গা থেকে আরম্ভ করে অনেক দূর পর্যন্ত হাওয়ায় ভেসে যাওয়া যায়। শুধু ভেসে যাওয়া নয়, অনেক সময় ডাইনে-ধাঁয়ে এদিক-ওদিক একটু-আধটু ঘোরাফেরাও সম্ভব হয়। এ বিষয়ে আমেরিকার দুটি ভাই—অর্ভিল ও উইলবার রাইট-সকলের চেয়ে বাহাদুরি দেখিয়েছেন। তাঁরা তাঁদের তৈরি ডানার সাহায্যে দশ-বিশ মাইল পর্যন্ত অনেকবার ঘুরে এসেছেন। কিন্তু এতে করে উপর থেকে নীচে নামা বেশ সহজ বটে, কিন্তু বাতাস ঠেলে উপরে ওঠা একরকম অসম্ভব বললেই হয়। ঘুড়ির যখন সুতো ছিঁড়ে যায় তখন সে পাথরের মতো ধপ করে না পড়ে কেমন ভেসে ভেসে হেলে দুলে এগিয়ে পড়ে। নানা কৌশল খাটিয়ে নানারকম আকারের ঘুড়িকে এইভাবে বাতাসে ভাসিয়ে কত হাজাররকম

নানা নিবন্ধ
১৮৩