পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যাহারা পিরামিড বানাইল, তাহারা কিরকম লোক ছিল? তাহাদের চালচলন পোশাক পরিচ্ছদ বাড়িঘর আচার-ব্যবহার এ-সবই-বা কিরকম ছিল? জানতে ইচ্ছা হয় না কি? যাহারা পুরাতত্ত্ববিদ পণ্ডিত, কেবল প্রাচীনকালের খবর খুঁজিয়া ফেরেন, তাঁহারা ইজিপ্টের মাটি খুঁড়িয়া তাহার ভিতর হইতে সেই কোনকালের ইতিহাসকে টানিয়া বাহির করিয়াছেন। কত ঘরবাড়ি, কত আসবাবপত্র, কত অদ্ভুত হবি, কত মোমে আঁটা মৃতদেহ, (Mummy) তাহার আর অন্ত নাই। ইজিপ্টে মৃতদেহ রক্ষার যে ব্যবস্থা ছিল, সে অতি আশ্চর্য। মৃতদেহকে পরিষ্কার করিয়া নানারকম মসলা মাখাইয়া মোমজামার ফিতা দিয়া এমন করিয়া মোড়া হইত যে হাজার হাজার বৎসর ধরিয়া সে দেহ আর পচিতে পারিত না। ফিতার উপর ফিতা, প্যাঁচের উপর প্যাঁচ। এক-একটি রাজার মৃতদেহ মুড়িতে পাঁচ-দশ মাইল ফিতা অনায়াসেই খরচ হইয়া যাইত। তাহার মধ্যে দেহগুলি কাঠ হইয়া শুকাইয়া থাকিত, কিন্তু পচিত না। এইরূপে অতি প্রাচীনকালের ইতিহাসে যে-সকল রাজার নাম শোনা যায় তাহাদেরও অনেকের আস্ত দেহ পাওয়া গিয়াছে।

 ইজিপ্টের আর-একটি জিনিস তাহার ‘ছবির ভাষা'। তাহাদের মনের কথাগুলি ভাষার অক্ষরে না লিখিয়া তাহারা ছবি আঁকিয়া বুঝাইয়া দিত। ইহাতে কত সুবিধা হইয়াছে বুঝিতেই পার। 'রাজা যুদ্ধ করিতে গেলেন’ ইহা ভাষায় না বলিয়া যদি জলজ্যান্ত ছবি আঁকিয়া দেখাই তবে এ কথাটুকু তো বলা হয়ই, সঙ্গে সঙ্গে রাজা কিরকম পোশাক পরিতেন, কিরকম রথে চড়িতেন, কিরকম অস্ত্র লইতেন, তাহাও বোঝাইয়া দেওয়া যায়। বাস্তবিকই এই-সমস্ত ছবি আর ঘরবাড়ির চিত্র দেখিয়া সেকালের ইজিপ্টকে কল্পনার চোখে বেশ পরিষ্কার করিয়া দেখা সম্ভব হয়।

সন্দেশ-জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৫


দক্ষিণ দেশ

 কলম্বসের আগে লোকে আমেরিকার কথা জানিত না—সে সময়ে লোকে তিনটিমাত্র মহাদেশের কথা জানিত। আমেরিকা আবিষ্কারের পর প্রায় একশত বৎসর পর্যন্ত আর কোনো নুতন মহাদেশের কথা শুনা যায় নাই। ১৬০১ খৃস্টাব্দে এক পর্তুগীজ নাবিক আসিয়া বলে যে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ অঞ্চলে সে এক প্রকাণ্ড নুতন দেশ দেখিয়াছে। তার পাঁচ বৎসর পরে স্পেন দেশের এক জাহাজের কাপ্তান বলে সেও নাকি ঐ দেশের কাছ দিয়া আসিয়াছে। তার পর বহুদিন পর্যন্ত ওলন্দাজ নাবিকদের মুখে ঐ দেশের কথা মাঝে মাঝে শুনা যাইত। কেহ কেহ সেই নুতন দেশে যাইবার চেষ্টায় জাহাজ ডুবি হইয়া মারা যায়। দু-একজন দেশে ফিরিয়া বলে, “দেশটা একেবারে ফাঁকা-দেখিবার কিছু নাই।”

 ১৬৪২ খৃস্টাব্দে টাসমান নামে এক সাহসী ওলন্দাজ নাবিক এই নূতন দেশের সন্ধানে বাহির হন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে একটা দ্বীপে গিয়া জাহাজ ভিড়াইলেন,

নানা নিবন্ধ
২১৩