পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মেরামত হইলে কাপ্তান কুক তীর ধরিয়া ধরিয়া উত্তর দিক পর্যন্ত ঘুরিয়া দেখিলেন। নূতন দেশের সমস্ত পূর্ব দিকটাতে ইংরাজের অধিকার ঘোষণা করিয়া তিনি তাহার নাম রাখিলেন “নিউ সাউথ ওয়েলস'। তার পর কথা উঠিল এই নূতন দেশটাকে লইয়া কি করা যায়। ইংরাজ গভর্নমেণ্ট বলিলেন, 'যে-সকল কয়েদী অপরাধীদের দ্বীপান্তরে তাড়ানো আবশ্যক, তাহাদের ঐখানে চালান করিয়া দাও।' তখন এগারটি জাহাজ বোঝাই করিয়া কয়েদী পাঠানো হইল। তাহাদের পাহারার জন্য সৈন্য গেল। শাসন ব্যবস্থার জন্য সরকারি কর্মচারী গেল, স্ত্রী পুত্র পরিবার লইয়া দলে দলে ডাক্তার নাবিক মজুর গেল। কাপ্তান ফিলিপ হইলেন এই দলের গভর্নর বা শাসনকর্তা। তাঁহারা সুবিধামতো জায়গা খুঁজিয়া সেইখানে কাঠের ঘরবাড়ি বসাইয়া বেশ ছোটোখাটো একটি শহর পত্তন করিলেন।

 কাপ্তান ফিলিপ সেদেশী লোকদের মনে সদ্ভাব জাগাইবার জন্য নানারকম চেষ্টা করিয়াও তাহাদের ভয় ও সন্দেহ দুর করিতে পারেন নাই। ভালো-ভালো বকসিস দিয়া নানারকমে লোভ দেখাইয়া তিনি দুই-এক জনকে অনেকটা বশ করিয়াছিলেন। তাহার মধ্যে বেলিনি নামে একজন ছোকরাকে তিনি নিজের বাড়িতে আনিয়া কয়েকদিন, খুৰ আমোদে রাখিয়াছিলেন। বেলিনি যখন তাহার লোকদের কাছে ফিরিয়া গেল তখন তিনি একদিন অনেকরকম উপহার সইয়া তাহার সঙ্গে দেখা করিতে গেলেন। দুঃখের বিষয় একজন সেদেশী লোকের সঙ্গে ‘হ্যাণ্ডশেক' করিতে যাওয়ায় সে হঠাৎ কেমন ভুল বুঝিয়া তাহাকে অক্রিমণ করিয়া কঁধের কাছে বল্লম বিঁধাইয়া দেয়। বেলিনির যত্নে ও সাহায্যে সেবার তিনি বাঁচিয়া গেলেন। ইহার পর হইতে বেলিনি তাঁহার খুব ভক্ত হইয়া উঠিল এবং ক্রমে সেদেশী লোকেদের সঙ্গে তাহার অনেকটা বনিবনাও হইয়া গেল।

 এমনি করিয়া নুতন দেশে ইংরাজের উপনিবেশ আরম্ভ হইল। কথা ছিল মাঝে মাঝে বিলাত হইতে জাহাজে করিয়া রসদ আসিবে, তাহাতে তাহাদের খাবার কষ্ট ঘুচিবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইংলণ্ড হইতে জাহাজ আসিয়া পৌছিতে অসম্ভবরকম বিলম্ব হইয়া গেল। শহরের চাল ময়দা শাক সবজী গোরু ছাগল সব ফুরাইয়া আসিল। গভর্নর হইতে আরম্ভ করিয়া প্রত্যেক লোকেই দিনে তিন ছটাক ময়দার রুটি, দুই ছটাক মাংস আর এক ছটাক চালের ভাত খাইয়া সপ্তাহের পর সপ্তাহ কোনোরকমে দিন কাটাইতে লাগিল।

 তাহাতেও যখন খাদ্য প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে, এমন সময় একদিন তিন জাহাজ বোঝাই করিয়া রসদ আসিয়া হাজির হইল। এইরকম কষ্টের মধ্যে অষ্ট্রেলিয়ায় ইংরাজ রাজ্যের পত্তন হইল। তাহার পর আরো কত লোক সেদেশে আসিতে আরম্ভ করিল; কেহ চাষবাসের জন্য, কেহ খনি খুঁড়িবার জন্য, কেহ দেশ আবিষ্কারের জন্য, কেহ কেবলমাত্র চাকুরি খুঁজিবার জন্য। একটা শহর ছিল দেখিতে দেখিতে দুই-চার দশটা শহর জাগিয়া উঠিল। ততদিনে তাহার ‘নিউ হল্যাণ্ড' নাম ঘুচিয়া নুতন নাম হইয়াছে অস্ট্রেলিয়া বা ‘দক্ষিণ দেশ'।

 অস্ট্রেলিয়ার মাঝখানে অনেকটাই সে সময়ে অজানা দেশ ছিল। বড়ো-বড়ো মরুভূমি, সেখানে কি আছে তাহা অনেকদিন পর্যন্ত কেহ জানিত না। ঐ-সকল অজানা দেশে যাইবার জন্য অনেক লোকে চেষ্টা করিতে লাগিল। এই-সকল ভ্রমণবীরের বীরত্ব-কাহিনী

নানা নিবন্ধ
২১৫