পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
 পুরাতনী
১২

গিরের মত আটকে যেত; তখন তাকে ধরে নিয়ে এসে পুষতুম। কিন্তু অনেক সময় পায়রা ধান খেতে আসতে দেরী করত কিম্বা মোটেই আসত না, তখন আমি মনে মনে খালি মা-কালীর কাছে বার বার মানত করতুম—“হে মা কালী, একটা পায়রা ধান খেতে আসুক; হে মা কালী, তোমায় জোড়া পাঁঠা আর এক বোতল মদ দেব, একটা পায়রা ধান খেতে আসুক।” এইরকম মানত করা আর সুবচনীর পুজো দেওয়া, মোকদ্দমা হারজিতের সময় চারদিকে শুনতে পেতুম। মোকদ্দমা হারজিত এ-সব যে কি ব্যাপার তা কিছুই জানতুম না। কেবল কথাগুলোই জানতুম। তাই আমারও যখন কিছু পাবার ইচ্ছে হত, তখন ঐ জোড়া পাঁঠা আর মদ মা-কালীর কাছে মানতুম। আমাদের বাড়ীর কাছেই এক কালীমন্দির ছিল। কারো মানসিক পূর্ণ হলে, কারো আরোগ্যলাভ বা মকদ্দমায় জিত এইরকম কোন কারণ ঘটলে, তাঁরা সেখানে পাঁঠা পাঠিয়ে দিতেন ও মদ নিয়ে যেতেন। এইরকম কোন উপলক্ষ্যে দেখেছি পাড়ার কতকগুলি বৃদ্ধা নিজেরা মদ ও শুদ্ধি পাঁচ রকমের ভাজা নিয়ে কালীমন্দিরের ভিতর যেতেন। আইমাকে ডাকলে তিনি আমাকেও সঙ্গে নিতেন, আর নিজেরা কালী ঠাকুরের সামনে বসতেন। মা-কালীর হাতে ছোট একটা পাতলা পিতলের বাটি থাকত, পুরুত ঠাকুর প্রথমে সেই পাত্রটিতে মদ ঢেলে দিতেন। তারপর কুমারী কন্যা বলে সকলের আগে আমার হাতে ঐরকম একটা ছোট বাটিতে মদ দিতেন, আর পাত্রটি আমার বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুলে, প্রথম আঙ্গুলে ও কড়ে আঙ্গুলের উপর ঠিক করে বসিয়ে দিতেন। মাঝের আঙ্গুল দুটো মুড়ে রাখতে হত। পরে পুরুত ঠাকুর নিজে এক পাত্র নিতেন ও আর সকলের হাতে এক একটি পাত্র দিতেন। তাঁরাও ঐভাবে ধরতেন আর ডান হাত দিয়ে মদের সঙ্গে সঙ্গে ভাজা খেতেন। যে বৃদ্ধাদের দাঁত নেই তাঁদের জন্য ভাজা গুঁড়ো করা থাকত। কালীমন্দিরের আর একটা অনুষ্ঠান দেখেছিলাম মনে আছে। আমার মা বোধ হয় কারো ব্যামোর সময় মানত করেছিলেন যে, আরোগ্যলাভ হলে