পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৫
পুরাতনী 

আমি ঘোমটা দিয়ে বিছানার এক পাশে আর তিনি ভোম্বলদাসের মত আর এক পাশে। লজ্জায় কারো মুখে কথা নেই—। আবার কিছুক্ষণ পরে তেমনি সমান তালে পা ফেলে উনি তাঁকে বাইরে পার করে দিয়ে এলেন।

 মনোমোহনের সঙ্গে ওঁর খুব ভাব ছিল। তিনিই ওঁকে প্রথমে পরামর্শ দিলেন যে—ভিক্টোরিয়া ত আমাদের দেশের লোককে সিবিল সার্বিসে ঢোকবার অনুমতি দিয়ে গেছেন, কিন্তু কেউ এ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে যায়নি। চলনা দেখি আমাদের সিবিল সার্বিসে নেয় কিনা। তিনি ক্রমাগত এইভাবে লইয়ে লইয়ে ওঁর বিলেত যাবার মত করালেন। বাবামশায়ের ইচ্ছে ছিল যে সব ছেলেরাই বড় হয়ে জমিদারী দেখে। কিন্তু উনি অনেক বলা-কওয়ায় বিলেত যাবার অনুমতি দিলেন।

 আমি প্রথম প্রথম লজ্জায় ওঁর সঙ্গে কথা বলতুম না। লজ্জা আমার অসাধারণরকমের ছিল। তখন উনি একবার বলেছিলেন যে—তুমি যদি কথা বলো ত যা চাও তাই দেব। তাতে আমি একটা ঘড়ি চেয়েছিলুম, উনিও দিয়েছিলেন। ওঁর বিলেত যাবার সময় অবশ্য সে অবস্থা কাটিয়ে উঠেছিলুম। আমার নাম জ্ঞানদা বলে উনি আমাকে ‘জ্ঞেনি’ বলে ডাকতেন।

 একদিন ওঁর যাবার সময় সময় দিদিমার কাছে বসে আমার একটা গান লেখবার সখ হল। এই পর্যন্ত লেখা হয়েছিল—

“কেমনে বিদায় দেব থাকিতে জীবন
তুমি তো যাবে আনন্দে, সঙ্গীগণ লয়ে সঙ্গে”—

 তারপরে আর এগোয় নি।

 সেই কাগজটা আমি ঘরে ফেলে গিয়েছিলুম, দিদিমা আবার ওঁকে সেটা দেখালেন। তারপর উনি এই গানটা রচনা করে ফেল্লেন—

কেমনে বিদায় দিব থাকিতে জীবন—
কোন প্রাণে যাব চলি বিজন গহন।