পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
হারানাে খাতা।

 একটী মুহূর্ত্তের মধ্যেই নরেশচন্দ্র সকল অবস্থা বুঝিয়া লইলেন। কি দারুণ দুর্ব্বিপাকে পতিত হইয়াই এই কচি বয়সের মেয়েটা আজ কি নিষ্ঠুর দুর্ভাগ্যের হস্তে নিজেকে ঠেলিয়া দিতে আসিয়াছে, সেই ভয়াবহ কাণ্ডটা যেন একটা প্রচণ্ড বিভীষিকার মূর্ত্তিতে নরেশের দুই চোখের সাম্‌নে অগ্নিময় হইয়া উঠিল। এই সমাজ-পরিত্যক্ত পতিত জীবগুলার শেষ দুরবস্থা তাহাদের পাপের ভার প্রায় এই রকমেই ভরাইয়া তােলে। কোন পতিতপাবন যদি নিজে আসিয়া এদের একটা সুব্যবস্থা করিতে পারেন, তবেই হয়ত এর একটু সদুপায় হয়। করুণায় একেবারে বিগলিত হইয়া পড়িয়া তিনি তৎক্ষণাৎ মেয়েটীর কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার বাড়ী কি বেশীদূর? কাছে হয়ত আমি যাব।”

 মেয়েটী রুমালে চোখ মুছিয়া হাত দিয়া দেখাইয়া বলিল, “ওই বড় বাড়ীটার একতলার একটা ঘরে আমি আর মা থাকি, দূরে যেতে আমার ভয় করে, আমি পারি না।”

 নরেশ তাহার হাত ধরিয়া বলিলেন, “চলো।”

 সােফার বলিল, “রাজা সাহেব! গাড়ী ঠিক হয়ে গেছে।”

 ননী উৎসাহিত হইয়া প্রস্তাব করিল, “ওহে, তাহলে এটিকে কিছু দিয়ে ডালিমের ওখানেই যাওয়া যাক্ চলো।”

 নরেশ কাহারও কথায় কর্ণপাত না করিয়াই অগ্রসর হইতে থাকিয়া সঙ্গিনী মেয়েটীকে সস্নেহে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তােমার নামটা বলতো?”

 সে বলিল, “আমার নাম সুষমা। কিন্তু আমায় সবাই বেদানা বলে ডাকে।”

 “তুমি ক’ বছরের?”

 মেয়েটী বলিল, “ন’ বছরের।”