পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
৯৩

 “নয়! তা কিন্তু মনে হয় না। আচ্ছা গান গেয়ে তুমি রোজ কত করে পাও?”

 সুষমা একটু চুপ করিয়া থাকিয়া তারপর আবার তেমনি সলিলার্দ্রকণ্ঠে উত্তর করিল, “এই তিনদিনে এক টাকা বার আনা পেয়েছি, তাতে আর এক শিশি ওষুধ বই হয়নি।”

 নরেশ কিছু বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “অত-কম কেন? একটা গানে কত নাও?”

 সুষমা বোধ হয় নিঃশব্দে কাঁদিতেছিল, সে এবার তাহা গোপন চেষ্টা না করিয়াই জবাব দিল, “কত আর নিই, যে যা দেয়। কেউ শুন্‌তেই চায় না, অনেকে এমন ঠাট্টা করে যে আমার গাইতে ভালও লাগে না। আজ তাই সারাদিন আসিনি, এখন মার বড় ক্ষিধে পেয়েছে—কি করি তাই এলুম। না হলে—”

 মেয়েটী আর কিছু বলিতে পারিল না, কেবল তাহার ক্ষুদ্র শরীরটুকু দুলিয়া দুলিয়া উঠিয়া তাহার অসহ্য দুঃখ জানাইয়া দিতে লাগিল।

 পাপের পরিণাম যেমন সচরাচর ঘটিয়া থাকে এ ক্ষেত্রেও তাহার অতিরিক্ত কিছু নয়। বয়সে বৃদ্ধা না হইলেও তরঙ্গিনী রোগে রোগে এমন দশা হইয়াছিল যে চোখে সে যেন দেখা যায় না। সেঁৎসেঁতে ঘরের মেজেয় ছেঁড়া ময়লা দুর্গন্ধ বিছানায় কঙ্কাল মূর্ত্তির মত মা পড়িয়া পড়িয়া যন্ত্রণায় আর্ত্তনাদ করিতেছে, গৃহসজ্জার মধ্যে দু একটি ওষুধের শিশি, একটা জলের ঘটি ও এক পাশে দু একটা হাড়িকুঁড়ি ও ময়লা কাপড় চোপড় পড়িয়া আছে। এই ভয়ানক দুরবস্থাপন্ন গৃহের মধ্যে গৃহস্বামিনীর কন্যা আসিয়া যখন দাঁড়াইল, এই ঘরের গৃহবাসিনীর সহিত তুলনায় তাহার সাজসজ্জাকে তখন কত বড় যে কৃত্রিম বলিয়াই বোঝা গেল, সে যেন বাহিরে থাকিতে অনুভবও করা যায় না। মেয়ের সাড়া