পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৯৫

ততই অবসন্ন হয়ে পড়েছিল। সুখ খুঁজতেই বাড়ীর বাইরে এসেছিলাম, খুঁজে দেখলুম,— তার একটা কণাও পেলুম না। আমার সেই কুঁড়েঘরে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, এই বাড়ীর তেতালাতেও তা পাইনি, তাই বড় সাধ ছিল ওকে ও পথে আর যেতে দিব না। ওর গলার জন্যে বছরখানেক আগে থেকেই ওর জন্যে ওরা দর দিচ্ছিল, আমি যেতে দিইনি। কি মনে করেছিলুম জানেন? আমার সব টাকা দিয়ে ওর জন্যে কোম্পানির কাগজ কিনে দেবা, তার আয়ে ওর খাওয়া পরে চলবে, আর ওকে খুর গান বাজনা শেখাব, বড় হয়ে ও একটা সঙ্গীত বিদ্যালয় খুলবে, তাই থেকে ওর নামও হবে, পয়সাও হবে, আর ধর্ম্মও থাকবে। তা হলো না। তা হলো না,—ভগবানের ইচ্ছে নয়—তা হলো না।”

 নরেশ এই রূঢ়ভাষিণী নিষ্ঠুর প্রকৃতির পতিতা মায়ের মনের ভিতরের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সন্তানের হিতাকাঙ্ক্ষার পরিচয়ে সেই মুহূর্ত্তেই তাহার জন্য অনেকখানি সহানুভূতিপূর্ণ হইয়া উঠিলেন, তারপর ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার টাকা ছিল, তাহলে এমন হলো কেন?”

 তরঙ্গিনী বলিল “ঠকিয়ে নিলে মশাই! ঠকিয়ে নিলে। ভদ্রলোক মনে করে শ্যামলাল পাইনের হাতে দশ হাজার টাকা কোম্পানির কাগজ কিনতে দিলুম। সেই টাকা নিয়েই সে ফেরার হলো! উল্টে তার পিছনে পুলিসে ডিটেকটিভে কত রকমে কত টাকাই আমার খরচ হয়ে গেল মশাই! ধনে প্রাণে আমায় সে মেরে গেল। তা যদি ধর্ম্ম থাকেন, তা হলে একদিন ঐ টাকা নেওয়া তার বেরুবে, ওম্‌নি হজম করতে পার্ব্বে না।—” আরও অনেক কটূক্তি সে তাহার নিজের ধনের অসৎ পথের অংশীদারের উদ্দেশ্যে ফোয়ারার মতই উৎসারিত করিয়া দিল। তারপর মনের জ্বালা, গালির বন্যায় অনেকখানি প্রশমিত হইয়া আসিলে পরে, কথঞ্চিৎ শান্তভাবে পুনশ্চ নিজের কাহিনী ফিরিয়া আরম্ভ করিল। অনেক আড়ম্বরে