পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ।

গগন ব্যবধান, তবুও মন-প্রাণ, না সঁপি যদি বুক না ফাটে
তাহার নিষ্ঠায় রাখিয়া বিশ্বাস স্বপন ভরে দিন নাহি যায়,
ভাঙিলে সে স্বপন—মরিতে নার যদি—ব’লনা ‘প্রেম’ তবে কভু তার

—তীর্থরেণু

 সুষমার মা মাসখানেকের মধ্যেই মরিল। তখন সুষমাকে লইয়া নরেশ একটু বিপন্ন বোধ করিলেন। পতিতার গর্ভজাত কন্যাকে নিজের ঘরে আনিয়া রাখা সঙ্গত নয়; অথচ থাকেই বা সে কোথা? তাহার শিক্ষা ও চিত্তবৃত্তির যে পরিচয় তিনি পাইতেছিলেন তাহাতে তাহার প্রতি মমতায় চিত্ত তাঁহার পরিপূর্ণ হইয়াই উঠিতেছিল, এমন জীবনটী যেমন করিয়াই হোক তাহাকে নির্ম্মল করিয়া রাখিতে হইবে; পাঁকের মধ্যে জন্মিলেও তাহাকে পঙ্কজরূপে ফুটিয়া উঠিতে সহায়তা করিতে হইবেই। ভাবিয়া চিন্তিয়া ভবানীপুরের প্রান্তে এই ছোট্ট বাড়ীখানি তাহার নামে কিনিয়া দিলেন। একটী বুড়ী দরওয়ান ও একটী বুড়া চাকর রাখিয়া তিনি সেই বাড়ীতে এই ভিন্ন জগতের মেয়েটীকে এক রকম বন্দীদশাতেই প্রতিষ্ঠিত করিলেন। ঝি প্রভৃতি ইচ্ছা করিয়াই রাখিলেন না। কারণ, ইহার পরিচর্য্যা করতে স্বীকৃত হইবে এমন দরের যে ঝি, অসৎ শিক্ষা দিবার গুরুমহাশয় তাদের মত অল্পই পাওয়া যায়—এই রকমই নরেশের বিশ্বাস ছিল।

সুষমার মায়ের সাধ ছিল মেয়ে সঙ্গীত কলাটা ভাল রকমে আয়ত্ত করিয়া তাহারই চর্চ্চায় ও শিক্ষায় জীবনোৎসর্গ করিতে পারে। নরেশচন্দ্রের ইহা অসঙ্গত ঠেকিল না, এই রকমই একটা কোন পথ ইহাদের