পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১০১

মুখে মুখে নীতিশাস্ত্রের অনেক শিক্ষাদানই করিলেন। ইঁহাকে পাইয়া সুষমা নিজেকে যেন কৃতার্থ বোধ করিল। এমন মহৎ সঙ্গ ও প্রকৃত স্নেহ সে ত কল্পনাতেও কখন পায় নাই।

 এদিকে কিন্তু বাহিরে বাহিরে নরেশ ও সুষমা সম্বন্ধে অনেক কিছুই রটিয়া উঠিতেছিল। নরেশ—অবিবাহিত ধনী ও নিরভিভাবক নরেশ একটা কম বয়সের—সে যে কত কম সে হিসাব রাখিতে কার গরজ পড়িয়া গিযাছে—মেয়েকে একখানা সাজান বাড়ীতে রাখিয়া তার উপর বিস্তর খরচপত্র করিতেছেন, তাঁর বন্ধু বান্ধবেরা আসিয়া সেখানে গানবাজনার মজলিস জমাইয়া তুলে;—আবাব সে মেয়েও দেখিতে ভাল, গায় ভাল, বাজায় উৎকৃষ্ট!—এসব যোগাযোগের মধ্যে সাধারণতঃ মানবকল্পনা কিসের সন্ধান পাইয়া থাকে! কাজেই চারিদিকে সুষমা সম্বন্ধে যে গুজব রটিল, সে তার বেশ অনুকূল নয়। নরেশের বাকি বন্ধু যারা, তারা ননীবাবুদের প্রতি তীব্র ঈর্ষা প্রদর্শন করিয়া নরেশকেও তাঁহার একচোখোমীর জন্য ঠাট্টা বিদ্রূপ ও অনুযোগ করিতে থাকিল। নরেশ ব্যস্ত হইয়া সকলকেই অল্প বিস্তর বুঝাতে চেষ্টা করিলেন যে, তাহাদের আন্দাজ একেবারেই ভিত্তিহীন, সুষমা তাঁহার আশ্রিতা।—আর কিছুই নয়। সে নেহাৎ ছেলেমানুষ এবং অত্যন্ত নির্ম্মল। বন্ধুরা মুখ টিপিয়া চোখের ইসারা করিয়া হাসিয়া উঠিলেন, বলিলেন, “বেশতো, হোক না সে সতীত্বের শ্বেতপদ্ম! আমাদের তাতে তো কোনই আপত্তি নেই। আমরা শুধু তার দুটো গান শুনে আসতে চাই এই বৈতো নয়।”

 অগত্যা গান শুনাইতে হইল এবং আরও দুচারবার বিশেষ অনুরোধ রক্ষা না করিয়া পার পাওয়া গেল না। ইহাঁদের মধ্যের দু একজন গূঢ় রহস্য করিয়া সুষমার সঙ্গে কথা কহিতে যাইতেই নরেশ চোক