পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
হারানাে খাতা।

রাঙ্গা করিয়া চাহিলেন এবং সেই হইতে তাঁহাদের বন্ধুত্বের অবসান হইল। নিজের সম্পত্তির উপরে উঁহার প্রবল আধিপত্যের চেষ্টা বোধ করিয়া বাকি সকলে কদাচ সুষমার গান শুনিতে চাহিলেও, তাহাকে অসম্মানের ভাবে সম্ভাষণ করিতে ভরসা করে না। কিন্তু তবুও সুষমা হঠাৎ একদিন নিজের সম্বন্ধে লোকমতটা ভালরূপেই জানিতে পারিল।

 সাধুটি বদরিনাথ চলিয়া গিয়াছেন, সুষমার বয়স এখন ষোড়শ পূর্ণ; ননীবাবু ও হরিধন এখন শুধু সপ্তাহে একদিন করিয়া আসে, বাকি দুজন একদিন অন্তরে। সুষমার মনটা আজকাল বড়ই শূন্য শূন্য বোধ হইতেছিল; নরেশ ইদানীং আর তেমন ঘন ঘন আসাযাওয়া করেন না। আসিলেও আর যেন তেমন প্রাণখোলাভাবে তাহার সহিত না মিশিয়া চুপচাপ গানের বুলিই শুনিয়া যান এবং গানের শেষে সবার সঙ্গেই, কোন দিন সকলের চেয়ে আগে উঠিয়া, নিঃশব্দে প্রস্থান করেন। কে জানে কেন সঙ্গতই হোক আর অসঙ্গতই হোক সুষমার প্রাণ ইহাতে ব্যথিত হয়, তাহার বুকের মধ্যে আঘাত লাগে।

 একদিন সে ইহার কারণ বুঝিতে পারিল। কালীঘাটে মহিলা সমিতি হইল। স্বদেশী সম্বন্ধে কোন ভদ্র মহিলা কি বক্তৃতা করিবেন। নরেশকে পত্র লিখিয়া তাঁহার অনুমতি লইয়া সে সেই সমিতিতে গেল। সে যেখানে বসিয়াছিল, কমবয়সী কতকগুলি বৌ ঝির সেইখানে সমাবেশ হইয়াছিল। তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ তাহার সঙ্গে আলাপ পরিচয় করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। একজন, অপরকে বলিল, “দেখেছিস্ ওর মুখের সঙ্গে আমাদের ছোট বৌদির একটু যেন আদল আসে। কে ভাই ও?”