পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
১০৩

 “জ্যাকেটটির ছাঁট তো বড় সুন্দর! জিজ্ঞেস্ কর্ না কাদের বাড়ীর মেয়ে না বউ?”

 “ওমা, বউ কি বলছিস্ লো! সিঁতেয় নাকি সিঁদুর আছে। জান্‌না ভাই—ও কে?”

 অবশেষে জানাজানি হইল। সুষম উহাদের প্রশ্নে প্রশ্নে বিব্রত হইয়া স্বীকার করিল, তার বিবাহ হয় নাই, তার বাপকুলের কেহ নাই। তার বাপের নাম জিজ্ঞাসায় সে নিরুত্তর রহিল। তারপর কার কাছে থাকে জিজ্ঞাসায় সে যখন বলিল, একাই থাকে, তখন সেই তরুণী মেয়েরা যেন দিশাহারা হইয়া পড়িল। একটী মেয়ে বুদ্ধি করিয়া প্রশ্ন করিল “তোমরা কি ভাই ব্রহ্মজ্ঞানী? তাদের ঘরের মেয়েরা মেমেদের মতন পড়াশোনার জন্যে বোডিং টোডিং-এও তো থাকে শুনেছি। সেই রকমই কি এখানে এসেছ?”

 সুষমা স্নান ও বিপন্নভাবে ঘাড় নাড়িল।

 এই সময়েই একটী প্রৌঢ়া উহাদের কথাবার্ত্তায় একটুখানি আকৃষ্ট হইয়া পড়িয়া তাহাদের সামনে আসিয়া সুষমার মুখের কাছে ঝুঁকিয়া পড়িয়া বলিয়া উঠিলেন, “দেখি কার পরিচয় শোধান হচ্ছে। ওমা! এ যে ওই ‘সুষমাকুটিরে’র সুষমা গো! অবাক্‌ কল্লি তোরা। ও আবার নিজের পরিচয় কি দেবে তোদের শুনি? চল্ চল্ ওদিকে গিয়ে বস্‌বি চল্। ছুঁড়িগুলোয় যদি কোন কাণ্ডজ্ঞান আছে! হরিবলো মন!—”

 নিজেদেব কাণ্ডজ্ঞানের অভাবটা কোথায় ঘটিয়াছিল ভালমতে বুঝিতে না পারিলেও কোথাও যে ঘটিয়াছে সেইটুকু বুঝিয়া লইয়া সেই অনুসন্ধিৎসাপরায়ণ তরুণীর দল দুমদাম করিয়া উঠিয়া পড়িল এবং ঝন্‌ঝন্ শব্দে অলঙ্কার বাজাইয়া সভামণ্ডপের অপর প্রান্তে চলিয়া