দৃঢ় হইয়া উঠিল। নিরপরাধিনী সুষমার প্রতি যে অবিচার হইয়াছে ইহাই তাহার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত।
সন্ধ্যাবেলায় একাকিনী সুষমা বসিয়া অর্গানের বাজনার সঙ্গে নিজের মধুর কণ্ঠের যোগ করিয়া গাহিতেছিল——
“ওহে জীবনবল্লভ! ওহে সাধব-দুর্ল্লভ।
আমি মর্ম্মের কথা অন্তরব্যথা কিছুই নাহি কব,
শুধু নীরবে যাব, হৃদয়ে লয়ে প্রেম মুরতি তব।—”
হঠাৎ খুব কাছেই জুতা-পায়ের শব্দে মুখ তুলিয়া দেখিল, নরেশচন্দ্র।
তৎক্ষণাৎ বাজান বন্ধ করিয়া সে উঠিয়া পড়িতে গেল। মাটিতে হাঁটু গাড়িয়া পায়ের কাছে প্রণাম করিল।
নরেশ ব্যগ্র হইয়া বারণ করিলেন, বলিলেন, “বেশ মিষ্টি লাগছিল, জান তো গান শুনতে আমি বড় ভালবাসি। যা গাচ্ছিলে গাও, আমি শুনি।”
সুষমা আজ্ঞা পালন করিল। গাহিতে তার উৎসাহ বর্দ্ধিত হইল। সে গাহিতে লাগিল—
সুখ দুঃখ সব ত্যজ করিনু, প্রিয় অপ্রিয় হে,
তুমি নিজ হাতে যাহা দিবে তাহা মাথায় তুলে লব।”
গান থামিলে তাহার দিকে —একটু নত হইয়া নরেশ কোমলকণ্ঠ কহিলেন—“নিজে হাতে ‘যা’ দেব, তা মাথায় তুলে নেবে কি? ‘তোমার মর্ম্মের কথা’ আমি না জানি তা’ নয়; আজ ‘আমার মর্ম্মের কথা’ আমি তোমায় জানাতে এসেছি, তুমি শুন্বে কি বেদানা?”
সুষমা এমন সুর ইঁহার কণ্ঠে কোন দিনই শুনে নাই। আর এই সব কথা! সে ত্রস্ত বিস্ময়ে অবাক হইয়া তাঁহার মুখের দিকে মুখ তুলিয়া চাহিল।