পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৫৭

জান বার হয়ে যাবে খুকি বউয়া! খোড়া কুচ তো আদমী মুহেমে দেয়।”

 তারপর নিজের তৈরি আটার রুটি ও আলুর তরকারি বানাইয়া এক ঘটি জলও থালায় খাবার আনিয়া তাহার সামনে ধরিয়া দিয়া বলিল “লে’ এখন উঠে বৈঠকে খা’লে বাবা; দুটো খা’লে।”

 সুষমার চোক দিয়া এতক্ষণের পর তাহার চোক নাক জ্বালা করিয়া অকথ্য যন্ত্রণারাশি তপ্ত অশ্রুর আকারে ছুটিয়া বাহির হইল। নিজের যে অরুন্তদ মর্ম্মব্যথা তার মনের ভিতরে জমাট বাঁধিয়া উঠিয়া তাহাকে প্রচণ্ডবলে আঘাত করিতেছিল, এই একমাত্র স্নেহ করিবার বুড়া সাথীটির এইটুকু স্নেহাভিব্যক্তিতে সেই অব্যক্ত দুঃখ তাহার ব্যক্তের সীমায় ফিরিয়া আসিল। সে খাবার কোলে করিয়া ক্রমাগত চোখই মুছিতে লাগিল।

 কানাই সিং সান্ত্বনা দিয়া বলিল, “খেয়ে লে বউয়া; খেয়ে লে, তোর অসুখ কুচ্ছু বাড়বে না, আমার কথায় বিশোয়াস্ কর। কচি বাচ্চা, কত উপোস কর্‌বি বল দেখি?”

 অনেক কষ্টে গলাধঃকরণ করিয়া সুষমা তার পুরাতন বন্ধুর যত্নের দান মোটা রুটির দু’এক খানা খাইয়া তখন বুঝিতে পারিল, এটুকু পাওয়ার তাহার বিশেষ প্রয়োজন ঘটিয়াছিল। অনেকটা ঠাণ্ডা হইয়া সে তখন স্নেহকারীকে একটু খুসী করিবার জন্য তাহার সঙ্গে গল্প আরম্ভ করিয়া দিল, “সিং-জী! আচ্ছা তোমার বউমেয়েরা সেখানে গেলে তোমার রুটি গড়ে দেয় তো? সেখানে তো নিজে রাঁধতে হয় না?”

 কানাই সিং একগাল হাসিয়া জবাব দিল “আরে নারে বউয়া। সেখানে হামি কিসের দুখে নিজে রান্‌তে যাবে? কিস্‌মতিয়া, ববুয়া হামার বড়া পুতৌ নান্‌কিয়া মাই সবকোই রুটি পেকিয়ে দেয়, হামি বৈঠে বৈঠে খাই। সেখানে রুটি বড় মিট্‌ লাগে। পানীয়ে