পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৫১

আছে? কিছুক্ষণ চিন্তাকুল অস্বস্তচিত্তে চাহিয়া চাহিয়া অবশেষে হালছাড়াভাবে নরেশচন্দ্র তাঁহার তীক্ষ্ণ পর্য্যবেক্ষণ— দৃষ্টির আঘাতে বিপন্নপ্রায় নিরঞ্জনের মুখের উপর হইতে চোখ ফিরাইয়া লইয়া আবার তাহারই হস্তাক্ষরযুক্ত কাগজখানা দেখিলেন। তারপর হঠাৎ অসাধ্য চেষ্টা পরিত্যাগপূর্ব্বক সহজভাব অবলম্বন করিয়াই সপ্রশংস ও সস্মিতমুখে কহিয়া উঠিলেন, “বাঃ বাঃ! ভারি সুন্দর তো হে, তোমার হাতের লেখাটী। আমার সেই কাগের ছানা বকের ছানাগুলি দেন মন্ত্রপূত হয়ে নতুন জন্মলাভ করেছে দেখছি যে!”

 নিরঞ্জন সপ্রীতসহাস্যে দৃষ্টি নামাইয়া কুণ্ঠিত-বিনয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করিল, “আর কিছু কি কপি করবার আছে?”

 নরেশ তাহার আগ্রহে অকস্মাৎ অত্যধিক উৎসাহিত হইয়াই উঠিলেন,—“কপি করবার সাধ যদি তোমার এতেও না মিটে থাকে নিরঞ্জন, তাহলে ভাই তোমার কাছে কি কৃতজ্ঞই যে হয়ে থাকবে ঐ “কর্ণধার” প্রেসের কম্পোজিটারের দল, সে আর তোমায় কি বলবো! আর তার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে না হয়ে উপায়ই নেই। যেহেতু ওদের কাছে গাল খেতে খেতে আমি দিনের মধ্যে কতবারই যে বিষম লেগে মরি। তার ওপরেও আবার আমায় দেখতে পেলেই ম্যানেজার মশাই ভীষণ তাড়া করে আসেন। প্রুফ দেখা,—সেও একটা মহামারী ব্যাপার। নিজের লেখা,—সে কি ছাই নিজেই বুঝ তে পারি? সাধ করে কি আর এর আর এক রকমের ভয় ভাবনায় আতঙ্কিত হয়ে রবিবাবু বলেছেন,—

“অনেক লেখার অনেক পাতক,
সে মহাপাপ করবো মোচন,
আমায় হয়ত করতে হবে আমার লেখার সমালোচন।”