পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৮৩

হাওয়া বহিয়া গেল কি না তা অবশ্য নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। এই গানটাই যে সে বিশেষ করিয়া এমন সময়টায় গাহিতেছিল ইহারই জন্য লজ্জায় তাহার মুখ রাঙ্গা হইয়া উঠিল।

 আগন্তুক ঘুরিয়া আসিয়া ইহার পরিত্যক্ত আসন খানায় বসিয়া পড়িলেন এবং ইহারই হস্তচ্যুত বাজনাটা নিজের জানুর উপর তুলিয়া ধরিয়া বাজনা রাখা জায়গাটা ইঙ্গিতে দেখাইয়া দিয়া উহাকে আমন্ত্রণ করিলেন, অস্পষ্টস্বরে বলিলেন “বসো”।

 মেয়েটী উহার পাশের জায়গাটীতে না বসিয়া খানিকটা দূরে খালি মেজের উপর বসিয়া পড়িল। তখন নরেশ —আগন্তুক নরেশচন্দ্র একবার বিব্রত ও অনুসন্ধিৎসুচক্ষে উহার আনত মুখের দিকে চাহিয়া দেখিলেন এবং পরক্ষণে সেতারে ঝঙ্কার তুলিয়া অনুরোধের সুরে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন “একটা গাইবে কি?”

 মেয়েটার মুখের উপর কোন ভাবের রেখাই পড়ে নাই, যা ছিল সে তার মনের ভিতরেই লুকানো ছিল, মুখখানাকে অমন ভাবশূন্য রাখিতে মনের মধ্যে তাহার যে কত খানি বেগ দিতে হইতেছিল, তা শুধু সেই জানে, তবে বাহিরে সে চেষ্টাটা তার ব্যর্থ হয় নাই। মাথা হেলাইয়া সে নিজের সম্মতি জানাইলে নরেশ অনির্দ্দেশ্যভাবে তারের উপর আঙ্গুলীর ঘা দিয়া আবার প্রশ্ন করিলেন “কোন্‌টা গাইবে?”

 সে নম্রস্বরে জবাব দিল “যেটা বল্‌বেন!”

 “আমি যেটা বলবো সেটাই যে তোমার গাইতে ইচ্ছে হবে, এমন কি কথা আছে? যেটা তোমার ভাল লাগবে সেইটাই তার চাইতে গাও না কেন সুষমা!”

 সুষমা ক্ষণকাল মাথা নত করিয়া কি ভাবিল, তারপর মুখ না তুলিয়াই আস্তে আস্তে গান ধরিল—