পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৮৭

সুষমা সুগভীর নিশ্বাসে যেন তাহার অন্তঃস্থ অসহনীয় যন্ত্রণানলের অনেকখানি বাহিরে প্রেরণ করিয়া নীরব হইল, কিন্তু নরেশচন্দ্রের কোমল চিত্তে তাহার সেই মর্ম্মবিদারী বেদনার কাতর কণ্ঠ অনেকক্ষণ পর্য্যন্তই সুরভরা বীণার তারের মত আপনা আপনি বাজিয়া চলিল। এযে কত বড় ব্যথার অভিব্যক্তি, কি হতাশার আবেদন, সে কথা যে তিনি জানিতেন।

 একটু কাছে আসিয়া দাঁড়াইলেন “আমি বুঝি বই কি বেদানা! তোমার দুঃখ যদি আমি না বুঝতুম,—সেই প্রথম দেখার দিনে, এতটুকু ছোট্ট মেয়ে যখন তুমি, সেই তখন থেকেই যদি না বুঝতুম, তা হলে হয়ত তোমায় আজ আমার এত কাছে এনে দিতে পারতো না! আমি জানি,—তোমার দুঃখ আমি জানি। তোমার আত্মত্যাগ সেও যে কত বড় তাও আমার অজ্ঞাত নয়। সে যদি ভুলতে পারতুম, আজ তোমায় আমাকে চিঠি লিখে ডেকে আনতে হতো না। কিন্তু শোন সুষমা! তোমার এই বন্ধনহীন নিঃসঙ্গ জীবনের কথা আমি ক্রমাগতই ভেবেছি, ভেবে কিন্তু কোন কুল কিনারাই খুঁজে পাই নি। দেখ, হয়ত এখনও অনেকদিন তোমায় বাঁচতে হবে। তার আগে রোগ ও জরার আক্রমণে অক্ষম হয়ে সেবার দরকার হওয়ার কিছুই বিচিত্র নয়। তারপর একটা অবলম্বন না রাখলে চিরদিন তোমার কাটবেই বা কি নিয়ে? কোন একটা পথ তুমি এখনও বেছে নাও।”

 সুষমা চুপ করিয়া রহিল, উত্তর দিল না, বা দিবার চেষ্টাও দেখাইল না।

 নরেশ তাহার এই নিশ্চেষ্ট লক্ষ্যে ইহাকে অর্দ্ধ সম্মতি মনে করিয়া ঈষৎ উৎসাহিতভাবে কহিতে লাগিলেন—“তোমার মায়ের যে ইচ্ছার উপর আমি তোমার শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেম, দেখছি তোমার