পাতা:বাগেশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী.djvu/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৬০
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী

কৌশল—এক কথায় রূপ দেবার ও ভাব প্রকাশ করার কৌশল—সমস্ত রয়েছে। - ভাল করে লিখতে হবে তাই ভাল করে কলম বাড়ছি, রুল টানছি,—ভাল করে বাজাবো বঁাশী ফুটোফাট বেছে কারিগরি করছি সরল বঁাশে;—নাচতে হবে ভাল করে তাই পায়ের নানা কায়দা শিখছি। ভাব নেই, ভাষাতে দখল নেই—ছন্দ ছাড়া হ’ল সব। পাগলের প্রলাপ আর ওস্তাদের আলাপ ছয়েরই মূল হ’ল ভাব, তবু যে দুয়ে ভেদ করি তার কি কোনো কারণ নেই ? লেখার বেলায় দেখি যে চেকু লিখছে আর যে ছবি লিখছে—দুয়ের কাজে ভেদ হচ্ছে সব দিক দিয়ে। তামাক, আনতে দেরী হওয়াতে রেগে চাকরের নাকে ঘুসি বসালেম, আর অভিনয় করে.ষ্টেজের উপরে উঠে একজন কারু বুকে ছুরি দিলেম—ভাবের বশে দুই ক্রিয়াই হ’ল— কিন্তু দুই কাজকেই এক শ্রেণীর কাজ বলে ধরা চল্লো না । চাকরকে মারলেম রাগের হেতু, নাটকের জগৎসিংহ হ’য়ে ওসমানকে মারলেম রসের খাতিরে, রাগের হেতু মোটেই নয়। রূপের কারণে নয় রসের কারণে যে মার তাই হ’ল ষ্টেজের মার বা মারের ভাণ মাত্র। এখন রস ও ভাব স্বষ্টির জন্য সকারণ মার বা সত্যিই মার যদি রঙ্গমঞ্চে গিয়ে দেওয়া যায় তবে রসের আগেই এসে হাজির হয় পুলিশ এবং লোকটিকে অকারণে প্রহারের জন্যে পড়ে হাতে হাতকড়ি ; ভাবের দোহাই চলে না তখন, কেননা সত্যি সত্যি মার রস দেয় না বেদনা দেয় । মানচিত্ৰ—ভাব জাগাবার কালে তাকে কাজে লাগানো চল্লো না, কোনো একটা জায়গার স্মৃতি তাও জাগিয়ে দিতে কাজে এলো না মানচিত্র। চিত্ৰপট দিয়ে ভাব জাগানে চল্লো, রস জাগানে চল্লো। এমনি তারাপীঠ শ্ৰীপটি প্রভৃতি প্রতীক চিত্র তন্ত্ৰ-মন্ত্রের কাজে এলো কিন্তু ভাব জাগাবার কাজে এলো না, আবার নীলাম্বরের নীরস চিত্র প্রতীক নয় কিন্তু আকাশের ভাবটার প্রতিম। নীলাম্বরী সাড়ি তাকে আকাশের প্রতীক বলে এক হিসেবে ধরা চলে আবার চলেও না—সে প্রতীক হ’য়েও প্রতিমা, কিন্তু তন্ত্রশাস্ত্রের একটা - যন্ত্রচিহ্ন সে কেবলমাত্র প্রতীক—বিশেষ নামে অভিহিত কতকগুলো রঙ ও রেখার সমাবেশ–নিজে সে কিছুর প্রতিমা নয় ভাবও জাগায় না, ভক্তেরই কাজে লাগে। প্রতিমা-শিল্পের কৌশলই হচ্ছে রূপটাকে ভাবের প্রতিম করে তোলাতে। একটা পোড়ামাটির পুতুল—তার সঙ্গে ভাব