পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
বিবিধ কথা

 বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস—উপন্যাস নয়? ‘উপন্যাস’ কি? বাস্তবজীবনের নিখুঁত প্রতিকৃতি?—এ কথা কোন্ শাস্ত্রে বলে? উপন্যাস যদি তাহাই হয়, তবে বঙ্কিমচন্দ্রের কাব্যগুলিকে ‘উপন্যাস’ বলিও না—কেহ মাথার দিব্য দেয় নাই। মানুষেরই জীবন ও চরিত্র লইয়া এ যাবৎ পৃথিবীর সাহিত্যে মহাকাব্য, ট্রাজেডি, আখ্যান-আখ্যায়িকা, গল্প-উপন্যাস, নভেল প্রভৃতি নানাজাতীয় কাব্য সৃষ্টি হইয়াছে—সকলেরই সার্থকতা রসসৃষ্টিতে। আরব্য উপন্যাসও উপন্যাস—আজও তাহা বিশ্বসাহিত্যের ক্ল্যাসিক; ট্রাজেডিও উপন্যাস, কারণ তাহাও মানুষের কাহিনী লইয়া রচিত; গদ্য-রোমান্স ও আধুনিক নভেলও তাহাই;—সর্ব্বত্রই মানুষের চরিত্র, জগৎ ও জীবন কবিকল্পনার বিষয়ীভূত হইয়াছে—কেবল রসসৃষ্টির রূপভেদমাত্র। উৎকৃষ্ট রস-প্রেরণা বা কবির রসদৃষ্টি যাহা সৃষ্টি করে, তাহার কোনও সংজ্ঞা নাই—সংজ্ঞা বা কোনও একটি বাঁধা-ধরা আকার-প্রকারের নিয়ম অনুসারে কবি-কল্পনা বাধ্য নয়। হোমার এক কালে যাহাকে এক রূপে প্রকাশ করিয়াছিলেন, শেক্সপীয়ার তাহাকেই আর এক রূপে, এবং আধুনিক কবি সেই বস্তুকে অন্যতররূপে প্রকাশ করিয়া থাকেন। যুগ, জাতি বা ব্যক্তি-মানসের বৈচিত্র্যবশে সেই একই রস বিভিন্ন প্রেরণায় বিভিন্ন রূপ ধারণ করে—এই রূপ-বৈচিত্র্যে রসিক-চিত্ত আরও আশ্বস্ত ও চরিতার্থ হয়। প্রতিভা যেমন মৌলিক, তাহার প্রকাশভঙ্গিও সেইরূপ মৌলিক; এজন্য, কোনও উৎকৃষ্ট কাব্য—গদ্য বা পদ্য—কোনও সংজ্ঞার দ্বারা নির্দ্দিষ্ট বা চিহ্নিত হইতে পারে না। তুমি তোমার বুদ্ধিবৃত্তির মূঢ়তাবশত সকল বস্তুকেই একটা সাধারণ নামের মধ্যে না ধরিতে পারিলে তৃপ্তি পাও না, তাই কতকগুলাকে এক-জাতীয় মনে করিয়া একটা নাম, আর কতকগুলিকে