পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রবি-প্রদক্ষিণ
১৭৫

সম্পূর্ণ বলিয়া মনে হইবে; গীতিপ্রেরণা ও কাব্যপ্রেরণাকে একই ধারায় মিলাইতে গিয়া কোনরূপ সূক্ষ্ম দার্শনিক তত্ত্ববাদের শরণাপন্ন হইতে হইবে না।

 রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের পূর্ব্বার্দ্ধ ভাগে যে কাব্যসৃষ্টির প্রেরণা লক্ষ্য করা যায়, তাহা আত্মভাবগত আনন্দ-মুক্তির প্রেরণা নহে। তখন জীবনের সহিত, জগতের সহিত, বিশেষ বা concrete-এর সহিত, সাক্ষাৎ-পরিচয়ের বিস্ময় তাঁহাকে আকুল করিয়াছিল; তখনও খণ্ডের মধ্যে অখণ্ডকে উপলব্ধি করিবার আগ্রহ প্রবল হইলেও, রবীন্দ্রনাথ সেই খণ্ডের মোহকে স্বীকার করিয়াছিলেন। তাই তাঁহার কাব্যে, মানুষের জীবন এবং মানবহৃদয়জগৎ, বহিঃপ্রকৃতির সহিত যুক্ত হইয়া, দেশকালের ইতিহাসের মধ্যেই একটি সুপরিস্ফুট মূর্ত্তি ধারণ করিয়াছিল। এই কালে রবীন্দ্রনাথ যাহা সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার ভাষা ভাব ও ছন্দ অঙ্গাঙ্গী হইয়া আছে, কোনও অঙ্গ অপর অঙ্গকে খর্ব্ব করে নাই; এই জন্য এই সৃষ্টি যথার্থ সৃষ্টি হইয়া উঠিয়াছে—ভাব ভাষাকে, কিংবা ভাষা রূপকে অতিক্রম করে নাই। রূপজগৎ ও ভাবজগতের মধ্যে কত অতর্কিত অভাবনীয় মিলন ঘটিয়াছে—ভাষার কি ঐশ্বর্য্য! ছন্দের কি বিচিত্র কলরোল! এই কালে কবিচিত্ত, ভাবপ্রধান হইলেও, রূপের বশীভূত হইয়াছে—জীবনের সুখদুঃখ ও প্রকৃতির রহস্যময় কটাক্ষসঙ্কেত রবীন্দ্রনাথের কবি-প্রাণ আলোড়িত করিয়াছে; এ পর্য্যন্ত তাঁহার কবিপ্রতিভা জীবনেরই ধ্যান করিয়াছে। আমরাও সেই কাব্যজগতে জীবনকে দেখিলাম জীবনেরই মধ্যে দাঁড়াইয়া। অতি ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ যাহা, যাহাকে আমরা ভাল করিয়া কখনও দেখি নাই, শ্রদ্ধা করি নাই—তাহাই এক অপূর্ব্ব মহিমায় মণ্ডিত হইয়া দেখা দিল; যাহা ক্ষণিক তাহার মধ্যে