পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8e বিভূতি-রচনাবলী দেবব্রত বলিল—আবার আপনি ওদের যান খাওয়াতে আপনার সেই খাতাখানা নিয়ে ওই বদমাইস্ হিমাংশুটা আজ কত ঠাট তামাসা করছিল—ওদের দেখান কেন ওসব ? অপূর্ব বলিল, এসব কথা আমি জানি নে, আমি লিখছিলাম ননীমাধব এসে বলে—ওটা কি ? তাই একটুখানি পড়ে শোনালাম। কি কি—কি বলছিল ? —আপনাকে পাগল বলে—ষত রাজ্যির গাছপালার কথা নাকি শুধু শুধু খাতায় লেখা আবোল-তাবোল শুধু তাতেই ভর্তি ? ওরা তাই নিয়ে হাসে। আপনি চুপ করে এইখানে মাঝে মাঝে এসে বসেন বলে কত কথা তুলেছে-- অপুর রাগ হইল, একটু লজ্জাও হইল। ভাবিল, খাতাখানা না দেখালেই হ’ত সেদিন । দেখতে চাইলে তাই তো দেখালাম, নইলে আমি সেধে তো আর— মাঝে মাঝে তাহার মনে কেমন একটা অস্থিরতা আসে, এসব দিনে বোর্ডিং-এর ঘরে আবদ্ধ থাকিতে মন চাহে না । কোথায় কোন মাঠ বৈকালের রোদে রাঙা হইয়া উঠিয়াছে, ছায়াভরা নদীজলে কোথায় নববধূর নাকছবির মত পানকলস শেওলার কুচ কুচা শাদা ফুল ফুটিয়া নদীজল আলো করিয়া রাখিয়াছে, মাঠের মাঝে উচু ডাঙায় কোথায় ঘেটুফুলের বন... এই সবের স্বপ্নে সে বিভোর থাকে, মুক্ত আকাশ, মুক্ত মাঠ,গাছপালার জন্ত মন কেমন করে। গাছপালা না দেখিয়া বেশীদিন থাকা তাহার পক্ষে একেবারে অসম্ভব ! মনে বেশী কষ্ট হইলে একথানা খাতায় সে বসিয়া বসিয়া যত রাজ্যের গাছের ও লতাপাতার নাম লেখে এবং যে ধরণের ভূমিত্রর জন্তে মনটা তৃষিত থাকে, তাহারই একটা কল্পিত বর্ণনার খাতা ভরাইয়৷ তোলে। সেখানে নদীর পাশেই থাকে মাঠ, বাবলা বন, নানা বনজ গাছ, পাখিডাকা সকালবিকালের রোদ--ফুল! ফুলের সংখ্যা থাকে না। বোর্ডিং-এর ঘরটায় আবদ্ধ থাকিরাও মনে মনে সে নানা অজানা মাঠে বনে নদীতীরে বেড়াইয়া আসে। একখানা বাধা খাতাই সে এভাবে লিথিয়া পুরাইয়া ফেলিয়াছে। অপু ভাবিল, বলুক গে, আর কখখনো কিছু দেখাচ্ছি নে। ওদের সঙ্গে এই আমার হ'য়ে গেল। দেবো আবার কখনো ক্লাসের ট্রানশ্লেসন বলে। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ফাত্তন মাসের প্রথম হইতেই স্কুল-কম্পাউণ্ডের চারিপাশে গাছপালার নতুন পাতা গজাইল । ক্রিকেট খেলার মাঠে বড় বাদাম গাছটার রক্তাভ কচি সবুজ পাতা সকালের রৌদ্রে দেখিতে হইল চমৎকার, শীত একেবারে নাই বলিলেই হয়। বোর্ডিং-এর রাসবিহারীর দল পরামর্শ করিল মামূজোরানে দোলের মেলা দেখিতে ঘাইতে হইবে। মাজোয়ানের মেলা এ অঞ্চলের বিখ্যাত মেলা। - অপু খুশির সহিত রাসবিহারীদের দলে ভিড়িল। মাজোরানের মেলার কথা অনেক দিন