পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃণাস্কুর ᎼbaᎦ$ ছেলেটি বঙ্গ সাহিত্যের বিজয়ী সেনাপতি বলে অভ্যর্থনা করলে। সোমনাথবাবু বললেন, ‘আপনি বর্তমান আধুনিকতম সাহিত্যের বড় ঔপন্যাসিক-আপনাকেও কিছু বলতে হবে।’ খুব আনন্দে কাটল । ওখান থেকে বার হয়ে যাবার কথা ছিল সাহিত্য-সেবক-সমিতির অধিবেশনে, কিন্তু তা আর যাওয়া সম্ভব হল না। প্রমথবাবুর সঙ্গে গল্প করতেই বেজে গেল নট। অতুল গুপ উপস্থিত ছিলেন–তিনি আমার বইখানার খুব প্রশংসা করলেন। তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন ল’ কলেজে। তাকে বললুম সেকথা । আজ একবার দুপুরে কাজে গিয়েছিলাম অক্ষয়বাবুদের বাডিতে। শীতল একখানা হাতের লেখা মাসিক পত্র বার করচে, তাতে লেখা দিঙে বলচে। কাল সে আসবে বেলা তিনটের সময় । সেখান থেকে পার্ক সার্কসের ট্রামে ফিরছিলুম—বৈকাল ছটা । পূর্বদিকের আকাশ অন্ধকার হয়ে আসচে। শিয়ালদহের কাছটায় ট্রামটা এলেই আজকাল পূর্বদিকে চাই। অন্মদিনও চাই, এমন হয় না—আজ যে কী অপূর্ব মনে হল। ..মকাল ফল, পিসিম, পুরনো বঙ্গবাসী, দুপুরের রৌদ্র, মাকাল গাছ, ঘুঘু পার্থী, বাঁশবন—‘কত কথা যে এক মুহূর্তে মনে এল! আমি এরকম আনন্দ একদিন মাত্র পেয়েছিলাম,—সেদিনটা স্কুলের ছাদ থেকে বহুদূরের আকাশটার দিকে চেয়েছিলাম এই সন্ধ্যা ছটার সময়ে । তার পরে সুরি লেনের কাছে নেমে গেলাম রাজকৃষ্ণদের বাড়ি যাব বলে । আমি শুধু প্রার্থনা করি, আমাকে আগে নিয়ে চল হে ভগবান—যাতে সর্বদা মন গতিশীল থাকে। কিসে মন বর্ধিত হয়, আনন্দ বধিত হয়, তার সন্ধান তোমার জানা আছে, আমাদের নেই—ভা ছাড়া আমার শিল্পী মন কি করে আরও পরিপুষ্ট হবে তাম সন্ধান তুমিই জানো। তোমার যে দিকে ইচ্ছা সে দিকেই নিয়ে যেও । অবশেষে ঘুরিয়া যাওয়াই ঠিক করে কালকার বম্বে মেলে বার হয়ে পড়া গেল। দিমটা ছিল খুব ভাল—বৈকালের দিকে ট্রেনটা ছাড়ল—বৰ্ষাশেষে বাংলার এ অংশটার শুামল-শ্ৰী দেখে বুঝতে পারলাম বাংলা বাংলা করি বটে, কিন্তু দেশের সমগ্র পরিপূর্ণভাকে কখনো উপভোগ করি নি—কী অপূর্ব অস্ত-আকাশের রঙীন মেঘস্তুপ, কী অপরূপ সন্ধ্যার শুামছায়া ...কোলাঘাটের যে এমন রূপ, তা এর আগে কে ভেবেছিল ?—পিছন থেকে চেয়ে চেয়ে দেখলাম, দেশের ভিটা সেদিন ধেথে এসেচি, তারই কথা মনে হল—সেই ঝিকৃরে গাছগুলো সন্ধ্যার ছায়ায় বাল্যের আনন্দ-ভরা এক অপরাচুের ছায়াপাতে মধুর হয়ে উঠেচে এতক্ষণ—এই তো পূজার সময়, বাবা এতদিন বাড়ি এসেচেন, আমাদের পূজার কাপড় কেন হয়ে গিয়েচে এতদিন—কোজাগরী পূর্ণিমার রাত্রির উৎসবের সে সব আনন্দ– কি জন কেন এই সব সময়েই তা বেশী করে মনে আসে । সব সময় এই দেশের ভিটার ছবিটাই মনে উৎসাহ, আনন্দ ও প্রেরণা দেয়-এ অতি অদ্ভুত ইতিহাস।