পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৌরীফুল &ፃ> শিরোমণি মশায় বললেন—বিশ্বেস ৷ সদ্‌গোপ ? —আজ্ঞে না, কলু। সর্বনাশ ! নতুন মাটির জাল ভর্তি জল ও কচি ডাবের রাশি দেখে পিপাসাত শিরোমণিমশায় যে আননা অনুভব করেছিলেন, তা তার এক মুহূর্তে কপূরের মত উবে গেল। কলুর দেওয়া জলসত্রে তিনি কি করে জল খাবেন ? তিনি নিজে এবং তার বংশ চিরদিন অশূদ্রে প্রতিগ্রাহী ; আজ কি তিনি—ও ! ভাগ্যে কথাট জিজ্ঞাসা করেছিলেন —নইলে, এখনি তেl• • • শিরোমণি-মশায় জিজ্ঞাসা করলেন—এ জলসত্ৰ কতদিনের দেওয়া ? —ত আজ প্রায় পনেরো-ষোল বছর হবে । শ্ৰীমন্ত বিশ্বেসের বাপ তারাচাদ বিশ্বেস এই জলসত্ৰ বসিয়ে যায়। সে হয়েছিল কি বলি শুনুন। বলে লোকট। সেই কাহিনী বলতে আরম্ভ করলে । আমিডোবের তারাচাঁদ বিশ্বেস যখন ছোট, চোদ-পনেরো বছর বয়স তখন তার বাপ মারা যায় । সংসারে কেবল ন’-দশ বছরের একটি বোন ছাড়া তারাচাদের আর কেউ ছিল না । ভাই-বোনে মাথায় করে কলা বেগুন কুমড়ে এইসব হাটে বিক্রি করতো ; এতেই তাদের সংসার চলতো । সেবার বোশেথ মাসের মাঝামাঝি তারাচাদ ছোট বোনটিকে নিয়ে নবাবগঞ্জের হাটে তালশাস বিক্রি করতে গিয়েছিল। ফেরবার সময় তারাচাঁদ মাঠের আর কিছু ঠিক পায় না—নবাবগঞ্জ থেকে রতনপুর পর্যন্ত এই মাঠটা সাড়ে চার ক্রোশের বেশী হবে তো কম নয়। কোথাও একটা গাছ পর্যন্ত নেই। বোশেথ মাসের দুপুর রোদে মাঠ বেয়ে আসতে তারাচাদের ছোট বোনটা অবসন্ন হয়ে পড়লো। তারাচাদের নিজের মুখে শুনেছি ছোট বোনটি মাঠের মাঝামাঝি এসে বললে—দাদা, আমার বড় তেষ্ট পেয়েছে, জল থাবো । তারাচাদ তাকে বোঝালে, বসলে—একটু এগিয়ে চল, রতনপুরের কৈবর্ত পাড়ায় জল খাওয়াবো । সেই একটু আগিয়ে মানে দু'ক্রোশের কম নয়। আর খানিকট এসে মেয়েটা তেষ্টায় রোদে অবসর হয়ে পড়লো। বারবার বলতে লাগলো—ও দাদা, তোর দুটি পায়ে পড়ি, দে আমার একটু জল.. তারাচাদ তাকে কোলে তুলে নিয়ে এই বটগাছটার ছায়ায় নিয়ে এসে ফেললে। ছোট মেয়েটা তখন আর কথা বলতে পারছে না। তারাচাদ তাঁর অবস্থা দেখে তাকে নামিয়ে রেখে ছুটে জলের সন্ধানে গেল। এখান থেকে অধিক্রোশ তফাতে রতনপুরের কৈবর্তপাড়া থেকে এক ঘটি জল চেয়ে এনে দেখে, তার ছোট বোনটা গাছতলায়, মরে’ পড়ে আছে, তার মুখে একটা কচুর ডগা! এই বটগাছটা তখন ছোট ছিল, ওরই তলায় অনেক কচুবন ছিল। তেষ্টায় যন্ত্রণায় মেয়েটা সেই বুনো কচুর ডগা মুখে করে তার রস চুষেছিল—সেই থেকে এই মাঠটার নাম হোল কচু চুরি মাঠ। তারাষ্টাদ বিশ্বেল ব্যবসা করে বড়লোক হয়েছিল। শুনেছি নাকি তার সে বোন