পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক లిఖః আমি বললুম—কেন, তোমাদের দেশে তো তোমার চেয়ে অনেক কম মাইনে পেয়েও লোকে বিয়ে করছে ? মডুতে তো সামান্ত ফিরিওরালাকে সস্ত্রীক জিনিস ফিরি করতে দেখেচি ? —বাবু, ওরা লেখাপড়া জানে না, তাই অমনি করে। আমি ইংরিজি স্কুলে তিন চার বছর পড়ে তো আর ওদের মতো ব্যবহার করতে পারিনে ! আরও জিজ্ঞেস করে জানলুম ওখানকার একটি মেয়ের সঙ্গে তার খুব ভাব। মেয়েটি সিংস্কুতে চুরুটের কারখানায় কাজ করে, সপ্তাহে দুটাকা করে মাইনে পায়। আমি বললুম—সে কি বলে ? —সে বলে বিয়ে করো। আমি সাহস পাইনি কিন্তু, কোথায় রাখবো, কি খেতে দেবো। এই তো সামান্ত মাইনে । —তার বাপ মা নেই ? —কেউ নেই, আমারই মতো অবস্থা । ডাকপিয়াদা আসলে বড় প্রেমিক, যেমন তার প্রণয়িনীর কথা উঠলো, সে আর অল্প কথা বলে না প্রণয়িনীর কথা ছাড়া। মেয়েটি নাকি বড় ভালো, তাকে খুব ভালোবাসে, চুক্লটের কারখানায় কাজ করে যা পায়, নিজের খাওয়া পরা বাদে সব জমিয়ে রাখে ওদের ভবিষ্যৎ সংসারের জন্তে, একটি পয়সা বাজে খরচ করে না । অত বড় বনের মধ্যে কিন্তু রাত্রে কোনো রকম শব্দ শুনলাম না বঙ্গস্তুদের । একটি শেয়াল পর্যন্ত ডাকলে না। খানিক রাত্রে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লুম। সকালে এদিকের ডাকপিয়াদা এল। ঠিক করাই ছিল যে আমি তার সঙ্গে মোংকেট পর্যন্ত উনিশ মাইল পথ হেঁটে যাবো । কিন্তু আমার সঙ্গী ডাকপিয়াদা কথায় কথায় রাত্রেই আমায় বলেছিল যে, পাহাড় জঙ্গলের পথ এখানে শেষ হয়ে গেল, এরপর আর বেশি জঙ্গল নেই, কেবল পড়বে রবারের বাগান আর ধান ক্ষেত। আবার জঙ্গল আছে মান্দালে ছাড়িয়ে গোরেটেক্ সেতু পার হয়ে উত্তর-পূর্ব ব্রহ্মসীমান্তে। সেদিকের বন অত্যন্ত নিবিড়, সে পথ অনেক বেশি দুর্গম । আমি ডাকপিয়াদাকে বললুম, এই নতুন লোকটিকে জিজ্ঞেস করে তো কতদূর আর জঙ্গল পড়বে ; ততদুর ওর সঙ্গে যাবে!— নবাগত ডাকপিয়াদা খাস বর্মিজ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানে না, তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব নয় আমার। আমার পূর্ব সাখী বললে—বাবু, ও বলচে সাত মাইল পর্যন্ত এই রকম জঙ্গল আর পাহাড়, তারপরে আবার বর্ম রবাবু কোম্পানির বড় একটা বাগান পড়বে দুতিন মাইল, তারপরে ধানের ক্ষেত আর বস্তি। এই সাত মাইল আমি ওর সঙ্গে গেলুম। প্রভাতের স্বর্যালোক বনের ডালে ডালে বাকাভাবে পড়েছে কারণ পাহাড়ের পূর্বদিকের অংশটা খুব নীচু।