পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 886. আমরা যুবকটির সঙ্গে আলাপ করলুম। আমাদের খুব ভালো লাগলো লোকটিকে। লেখাপড় বিশেষ কিছু জানে না, কিন্তু বেশ বুদ্ধিমান যে, তা কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় । আমি বললুম—আপনার পৈতৃক দেশ কোথায় ? —রাজধার্সাওন—বি এন আর এ—তবে এখানেই আছি আজ দশ বছর। —এই বনের মধ্যে বেশ ভালো লাগে আপনার ? —খুব শিকার মেলে কিনা! আপনার থেকে যান, ভালুক শিকার করতে যাবো । —ভালুক খুব আছে নাকি ? —এই যে বন দেখচেন, ভালুক আর সম্বর হরিণ এত আছে যে অনেক সময় দিনমানেও লছমীপুর গ্রামের মধ্যে ছটকে এসে পড়ে। আপনার পায়ে হেঁটে যাবেন না বনের মধ্যে দিয়ে—বড় বিপজ্জনক । আমি ঘোড়া দিচ্চি দুজনকে, সঙ্গে শিকারী গাইড দেবে, তবে যাবেন । আমরা বলুম, হেঁটে যখন যাবো ঠিক করেচি, তখন ঘোড়ায় চড়বে না, সেটা ঠিকও হবে না । যুবকটি ভেবে বললে—তীর্থ করতে যাবেন বলে কি আর একটু ঘোড়ায় চড়তে নেই ? বন কতখানি আপনারা জানেন না—বড় দেরি হয়ে যাবে বন পার হতে, যদি পায়ে হেঁটে যান। —কত বড় বন আপনার মনে হয় ? —দশ বারো মাইল খুব হবে, লছমীপুরের জঙ্গল দক্ষিণ ভাগলপুরের বিখ্যাত জঙ্গল। ঘোড়ায় যদি না যান, তবে একজন গাইড সঙ্গে নিয়ে যান। যুবক উঠে চলে গেলে আমরা দুজনে পরামর্শ করে ঠিক করলুম, সঙ্গে লোক নেওয়ারও কোনো দরকার নেই। ওতে আমাদের বাহাদুরি অনেকখানি কমে যাবে। অতিথিশালার ম্যানেজার বললেন—আপনাদের খাবার-দাবার সব তৈরি। যদি বেরুতেই হয়—তবে আপনারা আর বেশি দেরি করবেন না—কারণ জঙ্গল পার হতে খুব সময় নেবে। আহারাদির পর অম্বিকা বললে—একবার রাণীমার সঙ্গে দেখা না করে যাবো না হে। একবার আলাপ করে রাখি, পরে কাজ দেবে। তুমিও চল না—আলাপ করা যাক। দরকার অন্য কিছু নয়, উকিল মানুষ, এত বড় স্টেটের কত্রীর সঙ্গে আলাপ রাখলে স্টেটের মামলা মোকদমাগুলো পাবার দিক থেকে অনেক সুবিধে । লছমীপুর গাঢ়োয়ালী স্টেট। বাধিক আর খুব বেশি না হলেও নিতান্ত মৰ্ম্ম নয়। অম্বিকা বলেছিল দু-লাখ টাকা ; অত যদিও না হয়, লাখখানেকের কম নয় নিশ্চয়ই। বন থেকেই এদের আয় বেশি। বনের খানিকটা অংশ লক্ষ-ব্যবসায়ীদের ইজারা দেওয়া হয়, তা বাদে কাঠ ও সম্বর হরিণের শিং আর ছাল বিক্রী করেও যথেষ্ট আয় হয়। আমরা কালীবাড়ি দেখতে গেলুম। একটি বৃদ্ধ বাঙালী ব্রাহ্মণ এখানকার পূজারী,