পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকণ 8لأه দিনগুলি । বাবা যেন এখনও বসে গান গাইচেন আমাদের ঘরের দাওয়ায়—আবার কবে যাত্রা বসবে—সেই আননো দিনরাত চোখে নেই ঘুম । ● তার অনেকদিন পরে, মনে আছে যেবার আমি ম্যাটিক দিই—সেই শেষ বার কাদামাটির সময় চড়কতলার রৌদ্রে ছাত ধরে দাড়িয়ে থাকি, পরের বছর আসি নি—থার্ড ইয়ারে এসেছিলুম, কিন্তু সে কথা মনে নেই। আজ কত বছর পরে আবার এলুম সেই কাদামাটি দেখতে । গ্রীষ্মের ছুটির পরে স্কুল খুলেচে। অনেক কিছু ঘটে গেল গ্রীষ্মের ছুটিতে। দাৰ্জিলিং গিয়েছিলুম কল্যাণীকে নিয়ে—সেখানে অবজারভেটরি হিল থেকে নামচি—মুপ্রভা ও সেবার সঙ্গে দেখা । সুপ্রভার বাবাও ছিলেন। একদিন ওদের হোটেলে গিয়ে চা খাওয়া গেল । তারপর সেদিনই ঘুম থেকে আমি হেঁটে আসচি জলাপাহাড় রোড হয়ে—দেখি নীচে থেকে কে ডাকাডাকি করচে। চেয়ে দেখি সেবা ও বিপুল দাড়িয়ে । নেমে এলুম। কালিম্পং রোডের মোড়ে গাড়ির মধ্যে সুপ্রভা বসে আছে ৷ পান দিলে খেতে । গল্প করে তখনি জলাপাহাড় রোড ধরে চলে এলুম দাৰ্জিলিং-এ। পথের দৃশু অপূৰ্ব্ব । কি হিমারণ্যের শোভা ! কত কি ফুল ফুটে রয়েচে । অনেক ফুল তুলে আনলুম কল্যাণীর জন্তে । M. S. M. আপিসে একটি ছেলের সঙ্গে দেখা করলুম, সেদিন ট্রেনে যে সন্দেশ দিয়েছিল কড়াপাকের । কল্যাণী ধৰ্ম্মশালায় শুয়ে আছে—তাকে নিয়ে গিয়ে উঠলুম অকল্যাণ্ড রোডে। সেখান থেকে দাৰ্জিলিংএর দৃশু কি মুনীর দেখা যায়—বিশেষ করে আলো জালবার দৃপ্ত। নামবার দিন তরাইএর ঘন অন্ধকার অরণ্য ও অসংখ্য জলপ্রপাত আমার মনে পূৰ্ব্ব-দৃষ্ট কত দৃশুকে তুচ্ছ করে দিলে। বনগী এসে একদিন বারাকপুর গিয়েছিলুম। ইন্দুর সঙ্গে নদীর ধারে বসে গল্প করলুম, হাজারি সিংয়ের দোকানে বসে রেজিনা গুহের গল্প হল । হাজারি সিং বলে—সে দেখ নি তোমরা, সাক্ষাৎ সরস্বতী ! অথচ ও কখনো নিজেই দেখে নি । হাডাক জিঙ্কের গল্পও হল—যেমনি আজ গত ১৫১৬ বছর কি তারও বেশি হয়ে আসচে। গাড়ি পাঠিয়ে ওঁরা জামাইষষ্ঠীতে নিয়ে গেলেন । তারপর ষষ্ঠীর দিন হঠাৎ প্রশান্ত মহলানবীশ, কাননবালা ও মিসেস মহলানবীশ গেলেন বনগীয়ে । সেখান থেকে গেলেন বারাকপুরে । আমার রোয়াকে গিয়ে বসলেন । শু্যামাচরণদা চা ও খাবারের ব্যবস্থা করলে । আমি আষাঢ় মাসে একদিন গেলুম পাটশিমলে। পথে ভীষণ কাদা—বলদে-ঘোড়ামারি এক গ্রাম্য পাঠশালায় বসে মৌলবী সাহেবের সঙ্গে গল্প করি । সেখানে জল খেয়ে আবার রওনা হই। একটা বটগাছের তলার বসি । তারপর আসসিংড়ি গ্রাম ছাড়িয়ে জামাদা বিলের আগাড়ের সেই শিকড় তোলা বটগাছটার তলায় গিয়ে বসলুম। পাটশিমলে পৌঁছে পিসীমার মুখে কত পুরোনো কথা শুনি । পেছনের বাওড়ে বর্ষার দিনে হিজল গাছের ঘাটে কত তৃপ্তি সন্ধ্যাবেল ভাঙা-উচু বনের মধ্যে দিয়ে প্যাটাডির দিকে হাজরাতলার ধারে বেড়াতে গেলুম। সেই জামগাছের শেকড়টাতে বসলুম। তার পরদিন আবার সেই পথেই ফিরি। ঘাটশিলাতেও গিয়েছিলুম দ্বিজুবাবুর ওখানে, সন্ধ্যায় বসে রোজ গল্প হত। একদিন খুব বর্ষা। সন্ধ্যার আগে আমি মুনীলদের বাড়িতে এক স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম । ফিরবার সময়ে নদীর ধারের পথ হয়েই ফিরলুম। এক জায়গায় নাবাল জমিতে অনেকখানি জল বেধেছিল । বোমা ও উমাকে নিয়ে একদিন ফুলডুংরির পেছনকার শালবনে বেড়াতে গিয়েছিলাম। কি মুনীর কুরচি ফুল ফুটেচে বনে। একটা ঝর্ণ বর্ষার জলে ভরপুর, একে বেঁকে চলেচে বনের মধ্যে দিয়ে। ফুলডুংরি পাহাড়ে প্রায়ই সন্ধ্যার সময় বেড়াতে বেতুম। একদিন बि. ब्र. 8-२४