পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ք ԵՆ বিভূতি-রচনাবলী সাদা কুচে কুচে ফুল নোলকের মত, কত সবুজ কচি ফলের জালি । ওর পিছনে বিশাল, প্রাচীন বকুল গাছটা । বর্ষার দিনে মেঘের ঘন ছায়ায় অন্ধকার হয়ে আছে ওর তলা। আর্দ্র লতাকোণে কি স্বগন্ধ ফুল ফুটেছে—জলভরা বাতালে তার স্ববাস। এই খামল বনানীর নিবিড় পটভূমিতে সেই তিৎপল্লার লতাটা কি স্বন্দর দেখায় ঠেস দেওয়ালে বলে বসে চেয়ে দেখতে দেখতে এক-একদিন কি আনন্দ যে পাই । শুধু ঐ ক্ষুত্র তিৎপল্লার লতা আর তার ফুল নয়, এক অদ্ভূত ও আশ্চৰ্য্য জিনিস দেখি ওর মধ্যে । এ সামান্য বনলতা নয়। গভীর নিঃশবতার মধ্যে সন্ধ্যায় একমনে ওর দিকে চেয়ে থেকে দেখো । অসীমের মহিমময় বাণী এসে পৌছবে তোমার মনে । কি বিপুল সমারোহ করতে হয়েচে ওই বুনোলতাকে বাচিয়ে রাখতে, ওর ফুল ফোটাতে, ওর ফল পাকাতে। স্বর্ঘ্যের বিশাল অগ্নিকুণ্ডটা আকাশের দূর প্রান্তে বসাতে হয়েচে ওর জন্তে, কত কি গ্যাস, কত রাসায়নিক পদার্থ স্বষ্টি করতে হয়েছে ওর জন্তে, কোটি কোটি মাইল ইথারের সমুদ্র ভেদ করে স্বৰ্য্যরশ্মিকে পৃথিবীতে ছুটে আসতে হয়েচে ওকে বাচিয়ে রাখবার ব্যগ্র আগ্রহে। তবে আজ ওর ফুল ফুটেচে, ওর ফল পেকে লাল টুকটুক করচে । ক্ষরত্রহ্মের প্রাণময়ী বার্তা বহন করে এনেচে ওই বন্য লতা লোকলৈাকাস্তরের অসীমত থেকে । যে মহাশিল্পীর হাতের ও অতি স্বকুমার শিল্প, সেই শিল্পীর স্বাক্ষর আছে ওর পাতায়, ফুলে, লাবণ্যময় দুলুনিতে। ওর মধ্যে দিয়েই র্ত্যকে প্রত্যক্ষ কর । ঘাটশিলা থেকে আমি মনোহরপুর রওনা হই বেলা দুটোর ট্রেনে। গত পূজোর ছুটিতে দেশ থেকে ঘাটশিলায় এসেছিলাম বেড়াতে । বন্ধুবর অমর মিত্রের বাসার সামনে মাঠে একদিন জ্যোৎস্নারাত্রে বসে গল্পসল্প করছি, এমন সময়ে খবর পেলাম আমাদের দেশের স্কুল থেকে একটি ছেলে বেড়াতে এসে আমাদের বাসায় উঠেছে । রাত্রে ছেলেটির সঙ্গে কথা হোল, সে এসেচে বন ও পাহাড় দেখতে । কখনো দেখেনি একটা বড় রকমের বন, বড় একটা পাহাড়। সেই রাত্রেই ভাবলাম ওকে সিংডুমের সব চেয়ে বড় বনের অর্থাৎ সারেও অরণ্যের একটা অংশ দেখিয়ে দেবো । অনেকে হয়তো জানে না, সিংডুমের অর্থাৎ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ছোটনাগপুরের মধ্যে দুটি বৃহৎ অরণ্যানী বর্তমান । প্রথমে এ কথা বলা উচিত, ছোটনাগপুরের এ অংশকে প্রাচীন বাংলা পুথিতে ঝাড়খণ্ড বা ঝারিখণ্ড বলা হোত অর্থাৎ বনময় দেশ। এখন সভ্যতা বা রেলপথের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে পূৰ্ব্ব সিংহুমের বন প্রায় নিঃশেষ হয়ে সেই জায়গায় হয়েছে স্বাস্থ্যাম্বেৰী বাঙালীদের উপনিবেশ, কল-কারখানা ( যেমন টাটা, মৌভাণ্ডার ) বা ফসলের ক্ষেত। বন যা এখনো পূৰ্ব্ব সিংডুমে আছে, তাও থাকতো না, যদি গভর্ণমেণ্ট থেকে বনকে কামুনের বেড়া দিয়ে ঘেরা না হোত। পরীক্ষা দ্বারা দেখা গিয়েছে আইনের গওঁী দিয়ে বনকে রক্ষা না করলে ছ'বছরের মধ্যে (গড়পড়তা হিসাবে অৰিপ্তি ) একটা দশবর্গ মাইল ব্যাপী বনভূমি কাবার হয়ে যায় মাচুবের কুঠারের সামনে ।