পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२* বিভূতি-রচনাবলী ভাবলুম—ছেলেটার মধ্যে তো বেশ জিনিস আছে! যা ভাবতুম তা নয় --- . স্কুলে গিয়ে মাস্টারদের মধ্যে বললুম ব্যাপারটা। সেদিন টিফিনের সময় টিচারদের ‘কমন রুমে’ সতীশের কথা ছাড়া আর কোনো আলোচনাই নেই। কেউ বললে—দেখুন, কিসের মধ্যে কি থাকে! —সেই সতীশ ! এখন কি না— অঙ্কের মাস্টার বিপিনবাবু বললেন—আমার হাতে কুড়ির বেশি নম্বর ওঠে নি টেস্টে— দু-বারই— যন্ধুবাবু বললেন—আর ইংরিজি ফাস্ট পেপারেই কি, সেকেণ্ড পেপারেই কি-পচিশের বেশী কখনো পেতে দেখি নি—আর কি দুষ্টুই (ছল । সরস্বতা পুজোর সময় ভাড়ার থেকে একটিন রসগোল্লা সরিয়ে-- ইতিহাসের ছোকরা টিচার অরুণবাবু বললেন—তাই হয় মশাই । হিষ্ট্রিতে যারা-যারা বড় হয়েচে-নেপোলিয়ান বলুন, আলেকজাণ্ডার বলুন, লর্ড ক্লাইভ বলুন ও গিয়ে ইয়ে বলুন—সব গিয়ে দেখুন বিবেচনা করে— সেকেণ্ড পণ্ডিত বৃদ্ধ অঘোরবাবু বললেন—মাইনে কত হবে পাস করতে পারলে ? অরুণবাবু বাইরের খবর টিচারদের মধ্যে সকলের চেয়ে বেশী রাখতেন। তিনি বললেন—ত সেকেণ্ড ক্লাশ পাইলটের সার্টিফিকেট পেলেও ধরুন গিয়ে দেড়শো টাকা থেকে শুরু । —লুফে নেবে মশাই—তিন শো চার শো...আর ফাস্ট ক্লাশ সার্টিফিকেট পেলে তো কথাই নেই–চারশো থেকে আরম্ভ সাত শো, হাজার, দেড় হাজার— অঘোরবাবু আপন মনে ঘাড় দুলিয়ে বিড় বিড় করে বলতে লাগলেন—ও; কত বেত ভেঙেচি ওর পিঠে”যেমন ছিল গাধা, তেমনি ছঃ “যেই সতাশ কি না— বোধ হয় সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও তার মনে হোল যে আজ সাতাশ বছর ধরে তিনি এই স্কুলে নাম-সই করার ডাক টিকিটের দাম বাদ দিয়ে, চৌত্রিশ টাকা পনেরো আন মাইনেতে কাটিয়ে গেলেন । এর,পরে আর একদিন সতীশের সঙ্গে দেখা, মাসখানেক পরে রাস্তার ধারে একটা রোয়াকে বসেছিল আমায় দেখে নেমে এল । বললুম-সার্টফিকেট পেতে আর কত দেরি ? সতীশ পূর্বের মত বিনয়ের সঙ্গে বললে—আজ্ঞে, এখানে তো হয়ে গেল। এইবার করাচী গিয়ে ছ-মাস ট্রেনিং-এ থাকতে হবে। তা হোলেই আপনাদের আশীর্বাদে– বলেই সে খপ করে আমার পায়ের ধুলো নিলে। তারপর আমার সঙ্গে কিছুদূর গল্প করতে করতে এল । এরোপ্লেনের ব্যাপার নিয়েও দু-একটা কথা বললে । আমি বললুম–আচ্ছ, পাইলটের কাজে বিপদও তো আছে, কি বলে ? —স্তার, আর কিছু বিপদ না, এরোপ্লেন চালাতে চালাতে মাঝে মাঝে লাইটনিং পড়তে পারে—ঐ এক ভয়—