পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিরিঙ্গণ ३१७é আস্তে সে ইদারার অদূরবর্তী বড় ডুমুর গাছটার আড়ালে গিয়ে দাড়াল। ভূমুরের যে ঝাড় ঝাড় কাদি নেমেছে বৃদ্ধ মহাপুরুষদের দাড়ির মত, তারই ওপাশে কে যেন একজন মাথা নীচু করে দাড়িয়ে না ? —কে রে ? চাষ গুড়ির এদিক থেকে ওদিক ঘুরে গিয়ে দেখলে—ক্যাম্বিসের চটের গাউন পরে লম্বা চুলদাড়ি কাঠের চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে, ডুমুর ঝোড়ের তলায় চোরের মত দাড়িয়ে আছেন স্বয়ং বালাদাস পুরকোয়াস আপ্তে, পুরোহিত । দাতু ঠাকুরদাদা আমার শৈশবের অনেকখানি জুড়ে আছেন । সমস্ত শৈশব-দিগন্তটা জুড়ে আছেন । ছেলেবেলায় জ্ঞান হয়েই দেখেছি আমাদের বাড়ীতে তিনি আছেন । - র্তার বয়স হয়েছিল প্রায় এক-শ । জ্ঞান হয়ে পর্য্যন্ত দেখেছি তিনি আমাদের পশ্চিমের ঘরের রোয়াকে সকাল থেকে বসে থাকতেন। একটা বড় গামলায় গরম জল করে দিদি তাকে নাইয়ে দিত। ঠাকুরদাদা চোখে ভাল দেখতে পেতেন না । তাকে সকালে হাত ধরে রোয়াকে নিয়ে এসে র্তার জায়গাটিতে বসিয়ে দিতে হত । তামাক সেজে দিত দিদি। কেবল মা ঠাকুরদাদার ভাতের থালাটি নিয়ে গিয়ে তাকে খাইয়ে আসতেন । দিদি আবার তামাক সেজে দিত । কিছুক্ষণ পরে ঠাকুরদাদা বসে বসে আপনমনে কি বকতেন। একটু বেশি বেলায় বাবা নায়েবি করে কাছারি থেকে ফিরে বাড়ী ঢুকলেই ঠাকুরদাদা অমনি কান খাড় করতেন । * —কে এল ? হরিশ ? —হঁ্যা বাবা । —বাবা হরিশ, আমার বড্ড খিদে পেয়েছে। —সে কি বাবা, আপনাকে এখনও ভাত দেয় নি ? —না বাবা । খিদেয় মরছি, অ হরিশ । ভাত দিতে বলে দে । বাবার বয়স পঞ্চাশের ওপর । মাথার চুল প্রায় সব সাদা হয়ে গিয়েছে, বেশ মেটা-সোট নাদুস-মুদুল চেহারা, সবাই বলে বাধা নাকি দেখতে স্বপুরুষ। বাবা মাকে অন্থযোগ করলেন–আচ্ছা বাবাকে এখনও ভাত দাও নি ? ছিছি এণ্ড বেলা হল ! মা বললেন-ও মনে কি গো! দশটার সময় যে আমি নিজের হাতে খাইরে এসেছি।