পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 বিভূতি-রচনাবলী —তাদের সঙ্গে আমার একটু গোলমাল চলচে । জ্যাঠামশায় আর বাবাকে তারা খাটিয়ে নিতে । সে মেকৃদারে টাকা দিতে না । আমার সঙ্গে তো তা চলবে না । বাবা জ্যাঠামশায় ছিলেন সেকেলে মানুষ। তারা অত শত বুঝতেন না । —ত তো বটেই। —আমি সিঙ্গাপুরের একটা ফর্মের সঙ্গে সরাসরি কারবার করবার চেষ্টা করচি। নিজে খরিদ করে অপরকে মুনাফা খাওয়াবো, বাবা জ্যাঠামশায়ের মত অত বোকা আমি নই। —তা তো বটেই । বড়লোকদের সঙ্গে মতভেদ তর্কাতর্কি আমাদের মত গরিব লোকের সাজে না । অন্য কথা পাড়লাম। সতীশ টিন খুলে সিগারেট ধরালে । ও কোথায় একটা জমি কিনচে, সেখানে ফুল আর টোমাটোর চাষ করবে, সে সব গল্প করলে। আমি বল্লাম—সতীশদা, ছেলেবলায় তুমি বার্ডসাই খেতে মনে আছে ? —তখন তাই ছিল । সে সব কি আজকের কথা ! তখন আমার বয়েস কুড়ি কি বাইশ ! এখন হল সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ। মাথার চুলে পাক ধরেচে। —এখানে লাগচে ভালো সতীশদা ? —আচ্ছা, বলতে পারে, ট্যাংরার বিল পৰ্য্যন্ত মোটর চলবে ? —এই বর্ষাকালে ? না বোধ হয় । যাবে নাকি ? —যেতম । সেখানে জলপিপি আর ইসে বেশ পাওয়া যায়। জানো ? —আমি ও খবর রাখিনে বলতে পারবো না । দিন দুই পরে যথেষ্ট ফটো তুলে, যথেষ্ট শিকার করে, নতুন মডেলের অস্টিনে চড়ে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সতীশ চলে গেল কলকাতায় । আমিও চলে গেলাম আমার চাকুরিস্থল শিলিগুড়িতে । এর পর প্রায় স্বদীর্ঘ আঠারো-উনিশ বছরের পরে নানাদেশ ঘুরে নানা জায়গায় চাকরি করে আমি দেশে ফিরে এলাম। বাড়ীঘর ভেঙেচুরে গিয়েছিল, কিছু কিছু মেরামত করে নিতে হল। মাঝে মাঝে যে বাড়ী আসি নি তা নয়, সে খুব কম, বছর দুবছর অন্তর । ইদানীং তাও আসা ঘটতো না । এসে দেখি সতীশ তার বাড়ীতে আছে –কিন্তু এ কোন সতীশ ? সে সতীশ আর নেই। তাকে প্রথম দিন বেলতলার মাঠে দেখে চিনতে পারলাম না হঠাৎ ৷ রোগ হয়ে গিয়েচে, বুড়ো হয়ে গিয়েচে । পরনে আধ-ময়লা ছেড়া কাপড়। ময়লা গেঞ্জি । সতীশ বলে—কে ? রামলাল ? আরে বেশ বেশ । শুনলাম তুমি বাড়ীতে আসবে। —তোমার এরকম চেহারা হল কেমন করে সতীশদা ? —এক দিনে হয়নি, অনেক দিনে হয়েচে । তুমি অনেক দিন পরে দেখলে, তাই নতুন লাগচে ।