( ২৬ )
এ পর্য্যন্ত সে কেবল গাছের ডাল পাতা লক্ষ্য করিয়া ঢিল ছুঁড়িত, কখনও জীবহত্যা করে নাই। সেই জন্য উহাদিগকে দেখিবামাত্র তাহার মুখ শুকাইয়া গেল। একজন বালক বলিল —“দীননাথ—এইবার তোমার সাহসের পরিচয়টা দেও, আজ কটা পাখী মারিবে বলদেখি”?
দীন বলিতে যাইতেছিল—“আজ শরীরটা বড় ভাল নাই,— মা তাই কোথাও যেতে দেবেন না।”
কিন্তু সে কথা কহিবার আগেই আর একজন উপহাস করিয়া কহিল—“দীনুসিংহ কটা পাখী মারিবে—তা আর জিজ্ঞাসা করিতে? অসংখ্য!”
এই কথায় মহা হাস্য কোলাহল পড়িয়া গেল, দীন ইহাতে অত্যন্ত লজ্জিত এবং ব্যথিত হইয়া মনে মনে বলিল—“হা ভগবান—কেন তুমি আমাকে এমন দুর্ব্বল স্ত্রীলোকের প্রাণ দিয়া গড়িয়াছিলে? আমার কি বাস্তবিক একটুও পুরুষত্ব নাই? প্রতি পদে পদে আমি সকলের নিকট উপহাসাস্পদ হইব?
দীন নিজের দুর্ব্বলতা জয় করিতে দৃঢ় সংকল্প করিল। হায়! পুরুষত্ব ও নিষ্ঠুরতার মধ্যে যে অনেক প্রভেদ তাহা সে বুঝিল না। দীন উত্তেজিতস্বরে বলিল—“কবে ছেলেবেলায় কি করিয়াছি—তার জন্য কি চিরকালই আমাকে ঠাট্টা করিবে? তোমাদের সকলের আগেই আজ আমি পাখী মারিব”
বালকেরা দীনর কথা শুনিয়া সন্তুষ্ট চিত্তে সকলে মিলিয়া পাখী মারিতে যাত্রা করিল। প্রথমেই যে পাখীটি দেখিতে পাইল— সেইটিকে দেখাইয়া একজন বালক বলিল, “পালোয়ানজি, এইবার—এইবার”—