বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ধর্ম্মতত্ত্ব-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্দশ অধ্যায় –ভক্তি। as শিক্ষ। এখনও বুঝিলাম না। আমি সিদ্ধ কাটি লইয়া আপনার বাড়ী চুরি করিতে যাইতেছি। কিন্তু আপনি সজাগ আছেন, এজস্ত চুরি করিতে পারিলাম না। তার জন্ম ছঃখিত হইলাম না। ভাবিলাম, “আচ্ছা হলো হলো, না হলো না হলো।” আমি কি নিষ্কাম ধর্মের অনুষ্ঠান করিলাম ? গুরু। কথাটা ঠিক সোণার পাথরবাটির মত হইল। তুমি মুখে, হলো হলো, না হলো না হলো বল, আর নাই বল, তুমি যদি চুরি করিবার অভিপ্রায় কর, তাহা হইলে তুমি কখনই মনে এরূপ ভাবিতে পারিবে না। কেন না চুরির ফলাকাঙ্ক্ষী না হইয়া, অর্থাৎ অপহৃত ধনের আকাঙ্ক্ষা না করিয়া, তুমি কখন চুরি করিতে যাও নাই। যাহাকে “কৰ্ম্ম” বলা যাইতেছে, চুরি তাহার মধ্যে নহে। “কৰ্ম্ম” কি, তাহ পরে বুঝাইতেছি। কিন্তু চুরি “কৰ্ম্ম” মধ্যে গণ্য হইলেও তুমি তাহ অনাসক্ত হইয়া কর নাই। এজন্য ঈদৃশ কৰ্ম্মানুষ্ঠানকে সৎ ও নিষ্কাম কৰ্ম্মানুষ্ঠান বলা যাইতে পারে না । শিষ্য। ইহাতে যে আপত্তি, তাহ পূর্বেই করিয়াছি। মনে করুন, আমি বিড়ালের মত ভাত খাইতে বসি, বা উইলিয়ম দি সাইলেণ্টের মত দেশোদ্ধার করিতে বসি, ছুইয়েতেই আমাকে ফলাথ হইতে হইবে। অর্থাৎ উদরপূৰ্ত্তির আকাঙ্ক্ষা করিয় ভাতের পাতে বসিতে হইবে, এবং দেশের দুঃখনিবারণ আকাজক্ষা করিয়া দেশের উদ্ধারে প্রবৃত্ত হইতে হইবে। গুরু। ঠিক সেই কথারই উত্তর দিতে যাইতেছিলাম। তুমি, যদি উদরপূৰ্ত্তির আকাঙ্ক্ষা করিয়া ভাত খাইতে বসে, তবে তোমার কৰ্ম্ম নিষ্কাম হইল না। তুমি যদি দেশের দুঃখ নিজের দুঃখ তুল্য বা তদধিক ভাবিয়া তাহার উদ্ধারের চেষ্টা করিলে, তাহ হইলেও কৰ্ম্ম নিষ্কাম হইল না । শিষ্য। যদি সে আকাঙ্ক্ষণ না থাকে, তবে কেনই এই কৰ্ম্মে প্রবৃত্ত হইব ? গুরু। কেবল ইহা তোমার অনুষ্ঠেয় কৰ্ম্ম বলিয়া । আহার এবং দেশোদ্ধার উভয়ই তোমার অনুষ্ঠেয়। চৌর্য্য তোমার অমুষ্ঠেয় নহে । শিষ্য। তবে কোন কৰ্ম্ম অমুষ্ঠেয়, আর কোন কৰ্ম্ম অমৃষ্ঠেয় নহে, তাহা কি প্রকারে জানিব ? তাহা না বলিলে ত নিষ্কাম ধর্মের গোড়াই বোঝা গেল না ? গুরু। এ অপূৰ্ব্ব ধৰ্ম্ম-প্রণেতা কোন কথাই ছাড়িয়া যান নাই। কোন কৰ্ম্ম অমুষ্ঠেয় তাহ বলিতেছেন,— যজ্ঞার্থাৎ কৰ্ম্মণোহন্যত্র লোকোইয়ং কৰ্ম্মবন্ধন: | তদৰ্থং কৰ্ম্ম কৌন্তেয় মুক্তসঙ্গ: সমাচর ॥ ৩। ৯