છે૭૨ যশোহর-খুলনার ইতিহাস পাঠানরাজত্ব গিয়াছে, কিন্তু পাঠান শক্তি যায় নাই। বাহিরের স্রোত এখন অন্তঃসলিল হইয়া বহিতেছে। মোগল রাজতত্ত কড়িয়া লইলেও সমগ্র বঙ্গে কখনও সম্পূর্ণ প্রভুত্ব বিস্তার করিতে পরিবে কিনা সন্দেহ আছে। যেখানে মোগলের অত্যাচার, যেখানে মোগলের প্রতি অসন্তোষ বা যেখানে মোগলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ-বহ্নি জ্বলিবে, সেখানেই পাঠানের শত্রুপক্ষের দলবৃদ্ধি করিবে । সুতরাং হিন্দুস্বাধীনতার জন্ত সুকৌশলে চেষ্টা করিতে পারিলেই হিন্দু ও পাঠান উভয় বলের সাহায্য অনায়াসলভ্য হইয়া পড়িবে। সুযোগ বুঝিয়া কাৰ্য্য করাষ্ট এক্ষণে কৃতিত্বের পরিচায়ক। প্রতাপ এ সুযোগ পরিত্যাগ করিতে চাহিলেন না । তিনি নানাভাবে সৈন্ত গঠন ও সীমান্ত রক্ষা করিয়া যুদ্ধের আয়োজন করিতে লাগিলেন। কয়েকটি প্রধান কারণে তিনি যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইলেন। প্রথমতঃ আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রাধান্ত স্থাপন তাহার প্রথম উদ্দেশ্য হইল। এ উদেহু ছোট বড় সকলেরই থাকে, তাহারও ছিল। সে অরাজকতার যুগে সবলে দাড়াইতে না পারিলে, পতন অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং দাড়াইতে হইলেই যুদ্ধবল চাই। তেমন দাড়াইতে অনেকেই চাহিয়াছিল ; ভুঞারাজগণ সকলেই নিজের গণ্ডীতে মাথা তুলিয় দাড়াইয়াছিলেন ; সঙ্গে সঙ্গে প্রাধান্ত বিস্তারের জন্ত সকলেরই একটি তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল। সুতরাং প্রতাপাদিত্যের আত্মপ্রাধান্তের চেষ্টা স্বার্থমূলক বা ঘৃণাজনক হইতে পারে, কিন্তু তাহা তাহার মত বীরপুরুষের পক্ষে অস্বাভাবিক বা নিতান্ত অগৌরবের বিষয় ছিল না। প্রতাপের উখান চেষ্টা প্রারম্ভকালে ব্যক্তিগত বা প্রাদেশিক হইতে পারে, কিন্তু কাৰ্য্যক্ষেত্রে তাহার ফল বহুদূর গড়াইয়াছিল। দ্বিতীয়তঃ পাঠানের পক্ষসমর্থনের জন্ত প্রতাপ যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইয়াছিলেন। একটি ধৰ্ম্মবুদ্ধি তাহাকে এই কার্য্যে বিশেষভাবে উদ্রিক্ত করিয়াছিল। পাঠান রাজের কৃপাবলেই তাহারা প্রথম যশোররাজ্য প্রাপ্ত হন। পাঠানের ধনবলই যশোরের সমৃদ্ধির ভিত্তি। মোগলের বিপক্ষে যুদ্ধ পরিচালন জন্য যে সমস্ত ধন সম্পত্তি দ্যাস-স্বরূপ বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায়ের হস্তে সমৰ্পিত হইয়াছিল, তস্থার মোগলের চরণে উপঢৌকন দেওয়া নিতান্ত অকৃতজ্ঞের কায । যে কার্যোর জন্য দাযুদের জীবন গিয়াছে, যে সাধনায় পাঠানেরা ছিন্ন ভিন্ন উৎসন্ন হইয় পড়িয়াছে, সেই কাৰ্য্যের জন্ত যিনি উদ্যোগী হইবেন, তিনিই দায়ুদের প্রকৃত
পাতা:যশোহর-খুল্নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০৪
অবয়ব