পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অচলা কাহাকেও কোন প্রশ্ন করিল না, তাহার মুখের চেহারাও অন্ধকারে দেখা গেল না ; নামিতে গিয়া পা-দানের উপর তাঁহার পা যে টলিতে লাগিল, ইহাও কাহারও চোখে পড়িল না, সে যেমন নিঃশব্দে আসিয়াছিল তেমনি নিঃশব্দে নামিয়া পিসিমার পিছনে পিছনে বাটীর ভিতর চলিয়া গেল । মিনিট-কয়েক পরে দ্বারের ভারি পর্দা সরাইয়া যখন সে রোগীর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল, তখন মহিম বোধ করি তাহার বাটীর সম্বন্ধে কি-সব বলিতেছিল। সেই জড়িত-কণ্ঠের দুটো কথা কানে প্রবেশ করিবামাত্রই বুঝিতে বাকী রহিল না, ইহা অর্থহীন প্ৰলাপ এবং রোগ কতদূরে গিয়া দাড়াইয়াছে ; মুহূৰ্ত্তকালের জন্য সে দেয়ালের গায়ে ভর দিয়া আপনাকে দৃঢ় কবিয়া রাখিল। যে মেয়েটি রোগীর শিয়রে বসিয়া বরফ দিতেছিল, সে ফিরিয়া চাহিল এবং ধীরপদে উঠিয়া আসিয়া অচলাকে হেঁট হইয়া প্ৰণাম করিয়া সোজা হইয়া দাড়াইল । ইহার বিধবা বেশ। চুলগুলি ঘাড় পৰ্য্যন্ত ছোট করিয়া ছাটা ; ইহার মুখের উপর সৰ্ব্বকালের সকল বিধবার বৈরাগ্য যেন নিবিড়ভাবে বিরাজ করিতেছিল। স্নান দীপালোকে প্রথমে ইহাকে মৃণাল বলিয়া অচলা চিনিতে পারে নাই ; এখন মুখোমুখি স্থির হইয়া দাড়াইতেই ক্ষণকালের জন্য উভয়েই যেন স্তম্ভিত হইয়া রহিল ; একবার অচলার সমস্ত দেহ দুলিয়া নড়িয়া উঠিল ; কি একটা বলিবার জন্ত ওষ্ঠাধরও কঁাপিতে লাগিল ; কিন্তু কোন কথাই তাহার মুখ ফুটিয়া বাহির হইল না, এবং পরক্ষণেই তাহার সংজ্ঞাহীন দেহ ছিন্নলতার মত মৃণালের পদমূলে পড়িয়া গেল । চেতনা পাইয়া অচলা চাহিয়া দেখিল, সে পিতার ক্রোড়ের উপর মাথা রাখিয়া একটা কোচের উপর গুইয়া আছে । একটা দাসী গোলাপজলের পাত্র হইতে তাহার চোখে-মুখে ছিটা দিতেছে এবং পার্থে দাড়াইয়া স্বরেশ একখানা হাত-পাখা লইয়া ধীরে ধীরে বাতাস করিতেছে। ব্যাপারটা কি হইয়াছে, স্মরণ করিতে তাহার কিছুক্ষণ লাগিল। কিন্তু মনে পড়িতে লজ্জায় মরিয়া শশব্যস্তে উঠিয়া বসিবার উপক্রম করিতেই কেদারবাবু বাধা দিয়া কহিল, একটু বিশ্রাম কর মা, এখন উঠে কাজ নাই । আচল মুম্বকণ্ঠে বলিল, না বাবা, আমি বেশ ভাল হয়ে গেছি, বলিয়া পুনরায় বসিবার চেষ্টা করিতে পিতা জোর করিয়া ধরিয়া রাখিয়া উদ্বেগের সহিত বলিলেন, এখন উঠবার কোন আবশুক নেই অচলা, ববঞ্চ একটুখানি ঘুমোবার চেষ্টা কর । স্বরেশও অস্ফুটে বোধ করি এই কথারই অনুমোদন করিল। অচলা নীরবে একবার তাহার মুখের পানে চাহিয়া প্রত্যুত্তরে কেবল পিতার হাতখানা ঠেলিয়া দিয়া সোজা উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, ঘুমোবার জন্তে ত এখানে আসিনি বাবা >\e&