অনেক সময় দ্বিধা বোধ করিয়াছে, তবু মানিয়াছে। আজ তাহার মনের ভিতরে একটা বিদ্রোহ দেখা দিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, ভারতবর্ষ যেন কেবল নিষেধেরই মূর্তি।
চাকর আসিয়া খবর দিল, আহার প্রস্তুত— কিন্তু এখনো বিনয়ের স্নানও হয় নাই। বারোটা বাজিয়া গেছে। হঠাৎ এক সময়ে বিনয় সজোরে মাথা ঝাড়া দিয়া কহিল, “আমি খাব না, তোরা যা।” বলিয়া ছাতা ঘাড়ে করিয়া রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল; একটা চাদরও কাঁধে লইল না।
বরাবর গোরাদের বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইল। বিনয় জানিত, আমহার্স্ট স্ট্রীটে একটা বাড়ি ভাড়া লইয়া হিন্দুহিতৈষীর আপিস বসিয়াছে। প্রতিদিন মধ্যাহ্নে গোরা আপিসে গিয়া সমস্ত বাংলাদেশে তাহার দলের লোক যেখানে যে আছে সবাইকে পত্র লিখিয়া জাগ্রত করিয়া রাখে। এই- খানেই তাহার ভক্তরা তাহার মুখে উপদেশ শুনিতে আসে এবং তাহার সহকারিতা করিয়া নিজেকে ধন্য মনে করে।
সেদিনও গোরা সেই আপিসের কাজে গিয়াছিল। বিনয় একেবারে যেন দৌড়িয়া অন্তঃপুরে আনন্দময়ীর ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইল। আনন্দময়ী তখন ভাত খাইতে বসিয়াছিলেন এবং লছমিয়া তাঁহার কাছে বসিয়া তাঁহাকে পাখা করিতেছিল।
আনন্দময়ী আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “কী রে বিনয়, কী হয়েছে তোর।”
বিনয় তাঁহার সম্মুখে বসিয়া পড়িয়া কহিল, “মা, বড়ো খিদে পেয়েছে, আমাকে খেতে দাও।”
আনন্দময়ী ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, তবেই তো মুশকিলে ফেললি। বামুন ঠাকুর চলে গেছে— তোরা যে আবার—”।
বিনয় কহিল, “আমি কি বামুন ঠাকুরের রান্না খেতে এলুম। তা হলে আমার বাসার বামুন কী দোষ করলে। আমি তোমার পাতের প্রসাদ খাব মা। লছমিয়া, দে তো আমাকে এক গ্লাস জল এনে।”
লছমিয়া জল আনিয়া দিতেই বিনয় ঢক্ ঢক্ করিয়া খাইয়া ফেলিল।
৪৯