পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রাখিয়া দিল। পড়িতে অত্যন্ত ইচ্ছা করিল বলিয়াই পড়িল না। চিত্তকে কোনোমতেই বিক্ষিপ্ত হইতে দিবে না প্রতিজ্ঞা করিয়া নিজের বিদ্রোহী চিত্তকে পুনর্বার হারানবাবুর শাসনাধীনে সমর্পণ করিয়া আর-একবার সে সান্ত্বনা অনুভব করিল।


২৫

রবিবার দিন সকালে আনন্দময়ী পান সাজিতেছিলেন, শশিমুখী তাঁহার পাশে বসিয়া সুপারি কাটিয়া স্তূপাকার করিতেছিল। এমন সময় বিনয় আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিতেই শশিমুখী তাহার কোলের আঁচল হইতে সুপারি ফেলিয়া দিয়া তাড়াতাড়ি ঘর ছাড়িয়া পলাইয়া গেল। আনন্দময়ী একটুখানি মুচ্‌কিয়া হাসিলেন।

 বিনয় সকলেরই সঙ্গে ভাব করিতে পারিত। শশিমুখীর সঙ্গে এতদিন তাহার যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। উভয় পক্ষেই পরস্পরের প্রতি খুব উপদ্রব চলিত। শশিমুখী বিনয়ের জুতা লুকাইয়া রাখিয়া তাহার নিকট হইতে গল্প আদায় করিবার উপায় বাহির করিয়াছিল। বিনয় শশিমুখীর জীবনের দুই-একটা সামান্য ঘটনা অবলম্বন করিয়া তাহাতে যথেষ্ট রঙ ফলাইয়া দুই-একটা গল্প বানাইয়া রাখিয়াছিল। তাহারই অবতারণা করিলে শশিমুখী বড়োই জব্দ হইত। প্রথমে সে বক্তার প্রতি মিথ্যা ভাষণের অপবাদ দিয়া উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদের চেষ্টা করিত; তাহাতে হার মানিলে ঘর ছাড়িয়া পলায়ন করিত। সেও বিনয়ের জীবনচরিত বিকৃত করিয়া পাল্‌টা গল্প বানাইবার চেষ্টা করিয়াছে— কিন্তু রচনাশক্তিতে সে বিনয়ের সমকক্ষ না হওয়াতে এ সম্বন্ধে বড়ো একটা সফলতা লাভ করিতে পারে নাই।

 যাহা হউক, বিনয় এ বাড়িতে আসিলেই সব কাজ ফেলিয়া শশিমুখী তাহার সঙ্গে গোলমাল করিবার জন্য ছুটিয়া আসিত। এক-এক দিন এত উৎপাত করিত যে আনন্দময়ী তাহাকে ভর্ৎসনা করিতেন, কিন্তু দোষ তো

২১১