হরিমোহিনী সুচরিতাকে অনেক ক্ষণ ভাবিবার সময় দিলেন। তিনি তাঁহার নিত্যনিয়ম-মত একটুখানি ঘুমাইয়াও লইলেন। ঘুম ভাঙিয়া সুচরিতার ঘরে আসিয়া দেখিলেন, সে যেমন বসিয়া ছিল তেমনিই চুপ করিয়া বসিয়া আছে।
তিনি কহিলেন, “রাধু, অত ভাবছিস কেন বল দেখি। এর মধ্যে ভাববার অত কী কথা আছে? কেন, গৌরমোহনবাবু অন্যায় কিছু লিখেছেন?”
সুচরিতা শান্তস্বরে কহিল, “না, তিনি ঠিকই লিখেছেন।”
হরিমোহিনী অত্যন্ত আশ্বস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “তবে আর দেরি করে কী হবে বাছা?”
সুচরিতা কহিল, “না, দেরি করতে চাই নে। আমি একবার বাবার ওখানে যাব।”
হরিমোহিনী কহিলেন, “দেখো রাধু, তোমার যে হিন্দুসমাজে বিবাহ হবে এ তোমার বাবা কখনো ইচ্ছা করবেন না। কিন্তু তোমার গুরু যিনি তিনি—”
সুচরিতা অসহিষ্ণু হইয়া বলিয়া উঠিল, “মাসি, কেন তুমি বার বার ওই এক কথা নিয়ে পড়েছ। বিবাহ নিয়ে বাবার সঙ্গে আমি কোনো কথা বলতে যাচ্ছি নে। আমি তাঁর কাছে অমনি একবার যাব।”
পরেশের সান্নিধ্যই যে সুচরিতার সান্ত্বনার স্থল ছিল। পরেশের বাড়ি গিয়া সুচরিতা দেখিল, তিনি একটা কাঠের তোরঙ্গে কাপড়চোপড় গোছাইতে ব্যস্ত।
সুচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, এ কী!”
পরেশ একটু হাসিয়া কহিলেন, “মা, আমি সিমলা পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছি, কাল সকালের গাড়িতে রওনা হব।”
পরেশের এই হাসিটুকুর মধ্যে মস্ত একটা বিপ্লবের ইতিহাস প্রচ্ছন্ন ছিল, তাহা সুচরিতার অগোচর রহিল না। ঘরের মধ্যে তাঁহার স্ত্রী কন্যা
৫৭৯