পাতা:গল্পসল্প - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আরো-সত্য

 দাদামশায়, সেদিন তুমি যে আরো-সত্যির কথা বলছিলে, সে কি কেবল পরীস্থানেই দেখা যায়।

 আমি বললুম, তা নয় গো, এ পৃথিবীতেও তার অভাব নেই। তাকিয়ে দেখলেই হয়। তবে কিনা সেই দেখার চাউনি থাকা চাই।

 তা, তুমি দেখতে পাও?

 আমার ঐ গুণটাই আছে, যা না-দেখবার তাই হঠাৎ দেখে ফেলি। তুমি যখন বসে বসে ভূগোল-বিবরণ মূখস্থ কর তখন মনে পড়ে যায় আমার ভূগোল-পড়া। তোমার ঐ ইয়াংসিকিয়াং নদীর কথা পড়লে চোখের সামনে যে-জ্যোগ্রাফি খুলে যেত তাকে নিয়ে একজামিন পাস করা চলে না। আজও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, সারি সারি উট চলেছে রেশমের বস্তা নিয়ে। একটা উটের পিঠে আমি পেয়েছিলুম জায়গা।

 সে কী কথা, দাদামশায়। আমি জানি, তুমি কোনোদিন উটে চড় নি।

 ঐ দেখো দিদি, তুমি বড়ো বেশি প্রশ্ন কর।

 আচ্ছা, তুমি বলে যাও। তার পরে? উট পেলে তুমি কোথা থেকে।

 ঐ দেখো, আবার প্রশ্ন! উট পাই বা না-পাই, আমি চ’ড়ে বসি। কোনো দেশে যাই বা না-যাই, আমার ভ্রমণ করতে বাধে না। ওটা আমার স্বভাব।

 তার পরে কী হল।

 তার পরে কত শহর গেলেম পেরিয়ে— ফুচুং, হ্যাংচাও, চুংকুং; কত মরুভূমির ভিতর দিয়ে গিয়েছি রাত্রির বেলায় তারা দেখে রাস্তা চিনে চিনে। গেলুম উস্খূস পাহাড়ের তরাইয়ে। জলপাইয়ের বন দিয়ে, আঙুরের খেত

৫৯