পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০১ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত করেন।* জগদীশকে শ্রীহট্টের লোক বলা যাইতে পারে না, মাত্র তদীয় পূৰ্ব্বপুরুষ শ্রীহট্টবাসী ছিলেন। মাধবদাসের জন্ম শ্রীহট্টে না হইলেও তাহার পিতা, জ্যেষ্ঠতাত পিতামহ প্রভৃতি শ্রীহট্টবাসী ছিলেন বলিয়া—শ্ৰীহট্টবাসীর সন্তান বলিয়া—তাহার কথা এস্থলে উল্লেখিত হইল। মুনিব উদ্দীন মুনিব উদ্দীন একজন মোসলমান সাধুপুরুষ; ইহার নামান্তর দৈখোরা মোনশী। “যাহারা সংসারত্যাগী মহাপুরুষ, তাহারা প্রায়শঃ নিজ নাম জন্মস্থান ইত্যাদি গোপন করিয়াই থাকেন। ফলতঃ যাহারা নিজকে আউলিয়া বা পাগল বলিয়া রটাইয়া আত্মগোপন করিয়া থাকেন, তাহারা নিজের জন্মগত পরিচয় দিবেন দূরে থাকুক, তাহারা কোন ধৰ্ম্মাবলম্বী, বাহ্য আচার আচারণে অনেকে তাহাও প্রকাশ করেন না। এই নিমিত্ত অনেক ইউরোপীয় পৰ্যটক ফকিরের বেশ ধরিয়া মক্কা মদিনা পরভৃতি স্থানে গমন করিতে পারিয়াছেন।” “এই সাধুপুরুষের জন্মস্থান নাকি নোয়াখালি অঞ্চলে ছিল। কিন্তু তিনি আপনার জীবনের প্রথমাবস্থায়ই জন্মভূমি পরিত্যাগপূৰ্ব্বক আমাদের এই শ্রীহট্ট অঞ্চলে আসিয়া আমরণ এখানেই অবস্থিতি করিয়াছিলেন। শুনা যায় আজিও বাহাদুরপুরে তাহার সমাধি স্থান আছে। শ্রীহট্টে অনেক মোসলমান সাধু মহাত্মা আসিয়া বাস করেন, তাহার একটু কারণও আছে। সুপ্রসিদ্ধ পীর শাহজলাল মজঃরদ এই স্থানে আসিয়া জীবনের শেষাদ্ধকাল যাপন করেন এবং এই স্থানে আজিও তাহার সমাধি মন্দির বক্তমান থাকিয়া সমগ্র মোসলমান-জগতে একতম দর্শনীয় পীঠস্থানরূপে পরিণত হইয়াছে।” “এই মোসলমান সাধকটির উপনাম “দৈখোরা” হইবার কারণ এই যে ইনি দধিভক্ষণে বিশেষ আশৰ্ত্ত ছিলেন। প্রকৃত নাম না জানায় সাধারণে র্তাহাকে “দৈখোরা মোনশী” বলিয়া সম্বোধন কবিত এবং সাধু নিজকে দৈখোরা পাগল বলিয়া অভিহিত করিতেন।” “এই সাধু সৰ্ব্বদাই অতি সুমিষ্টস্বরে সঙ্গীত করিতেন। গানগুলিতে র্তাহার নাম যোজিত থাকায় ঐ সকল তাঁহারই রচিত, এ কথা স্পষ্টই সূচিত হয়। ঐ সকল গান বাউল সঙ্গীতের মত গৃঢ়ার্থক দেহতত্ত্ব সম্বন্ধীয় হওয়াতেই কেহ কেহ তাহাকে “বাউল’ মনে করিতে পারেন। কিন্তু আমাদের ধারণা এই যে তিনি “বাউল” সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন না। + + + তাহার কণ্ঠস্বর এমন সুমধুর ছিল যে র্তাহার গান শুনিলে পাষাণ হৃদয়ও দ্রব হইত, যে একবার শুনিত সেই মুগ্ধ হইত এবং তৎপ্রতি অনুরক্ত হইত। + + + ফলে শ্রীহট্টের পূৰ্ব্বোত্তর অঞ্চলে কৃষিজীবী মৎস্যজীবী প্রভৃতি নিম্নশ্রেণীর মোসলমানগণের মধ্যে এই দৈখোরা সাধুর গান অত্যন্ত প্রচলিত এবং সেই শ্রেণীর হিন্দুদিগের মধ্যেও ভদ্রোচিত কোনও কোনও গান গীত হইতে শুনা যায়। ১০৯. মাসিক বিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকায় (৪১০ গৌরাদেব) ৪০৩ পৃষ্ঠায় “যাদব ও মাধব"প্রবন্ধে ৪১১ অব্দের পত্রিকায় “মাধবও কৃষ্ণমঙ্গল”প্রবন্ধে এবং ৪১২ অব্দের উক্ত পত্রিকায় “প্রেমবিলাসের প্রামাণ্যতা” “মাধব”ও “বঙ্গ ভাষা ও সাহিত্যগ্রন্থে মাধব সংবাদ”ইত্যাদি প্রবন্ধে আমরা কৃষ্ণমঙ্গল বচয়িতা এই মাধব সম্বন্ধে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করিয়াছি এ প্রবন্ধ তাহারই সংক্ষিপ্ত সার। আরএক পরাশর সূত—র্তাহার নাম—মাধবাচাৰ্য্য, তিনি চণ্ডীকাব্য প্রভৃতি প্রণেতা; উক্ত প্রবন্ধাদিতে উহার কথাও পাওয়া যাইবে, তিনি এই কৃষ্ণমঙ্গল রচয়িতা হইতে ভিন্ন ব্যক্তি। তিনি শক্তি উপাসক, সঙ্গীত ব্যবসায়ীও গৃহাশ্রমী ছিলেন। ইনি বৈষ্ণব ও সন্ন্যাসী।