পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

48we রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র অংশতঃ ভাগী, তাহার সন্দেহ নাই । আমরা উপরে বলিয়াছি, মাংস ভোজনে শরীরের বৃদ্ধি আছে ; স্বাস্থ্যের উন্নতি আছে ; দেশ কাল ভেদে মাংস নহিলে জীবন রক্ষাই চলে না। এমন আহার মাংসভোজনে অধৰ্ম্ম আছে কি না ? উত্তর দেওয়া তত সহজ নহে। ‘ধৰ্ম্মস্ত তত্ত্বং নিহিতং গুহায়াম্। নতুবা মনুষ্যসমাজে এ বিষয়ে এত মতভেদ কেন ? ইউটিলিটি ধৰ্ম্মের প্রমাণ বলিয়া আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে ; লোকহিতই ধৰ্ম্ম । কিন্তু কোন একটা কাৰ্য্য ধৰ্ম্মসঙ্গত স্থির করিতে গিয়া যিনি ক্ষতি লাভ গণনার হিসাব করিতে বসেন, এই কার্য্যে লোকহিত হইবে কি না, বিবিধ যুক্তি ও বিবিধ বিজ্ঞানেব সাহায্যে অঙ্কপাত করিয়া গণনা করিতে বসেন, র্তাহার মত নিৰ্ব্বোধ দ্বিতীয় নাই । এরূপ গণনা অসম্ভব। এই বিচারে গণনার আয না লইয়া আমাদের সহজ ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তি কি বলে, তাহার সন্ধান লওয়াই বিধেয় । ইংরাজিতে যাহাকে কনশেন বলে, আমি তাহাকেই সহজ ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তি বলিতেছি। এ প্রবৃত্তিই যে আবার সকল লোকের পক্ষে একই রকম ও এই প্রণালীতেই যে সৰ্ব্বত্র খাটি উত্তর পাওয় যাইবে, কোথাও ঠকিতে হইবে না, তাহাও আমি বিশ্বাস করি না। চোরের সহজ ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তির উপর নিভর করিয়া থাকিতে আমার সাহস হয় না। তবে ধৰ্ম্ম নিরূপণের সময় মোটের উপর ইউটিলিটির হিসাব ও ক্ষতি লাভ গণনা অপেক্ষ ইহার উপর নির্ভরই শ্ৰেয়: । নিষ্ঠুরতা যতই আবখ্যক হউক না কেন, সাধু লোকের সম্বন্ধে ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তি নিষ্ঠুরতার প্রতিকূল। নিষ্ঠুরতার দিকে সাধু লোকের অনুরাগ হইতে পারে না। অথবা নিষ্ঠুরতায় যাব যত বিরাগ, সে তেমনই সাধু । মনুৰ্যোর প্রতি নিষ্ঠুরতা সৰ্ব্বতোভাবে সাধু প্রকৃতির পক্ষে কষ্টকর ; ইতর জীবের প্রতি দয়াও সংসম্মত। এমন কি, সাদা চামড়ার মধ্যেও সময়ে সময়ে পশুপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। পাঠক মহাশয় ক্ষমা করিবেন, শ্বেত চৰ্ম্মেব অভ্যন্তরে যে বিশুদ্ধ মানবপ্রেম বৰ্ত্তমান থাকিতে পারে, সহস্র ঐতিহাসিক উদাহরণ সত্ত্বেও আমি ইহা সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস করিতে পারি না। এই ভয়ানক অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কার হইতে মুক্তিলাভ আমার পক্ষে একরকম অসম্ভব। ইতিহাস ও কোন একটা পাশ্চাত্য ফিলানথ,পির প্রকৃত উদাহরণ সম্মুখে ধরিলেই সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপমধ্যে উনিশ শত বৎসরের খ্ৰীষ্টানির ধারাবাহিক রক্তাঙ্কিত চিত্রপট সম্মুখে উপস্থিত হইয়া আমাকে অবসন্ন করিয়া ফেলে। মানবপ্রেম সম্বন্ধে যাহাই হউক, ইউরোপের লোকেও পশুক্লেশনিবারিণী সভা স্থাপন স্বারা এবং পাস্তুর-প্রবত্তিত চিকিৎসা প্রণালীর বিরোধাচরণ করিয়া পশুপ্রেমের পরিচয় দেন ; কেহ কেহ ব| আমিষাহার বর্জনের ফ্যাশন তুলিয়া ইন্দ্ৰিয়সংযমের পরাকাষ্ঠা দেখান। স্বতরাং জীবহিংসা ও জীবের প্রতি নিষ্ঠুরতা ষে সাধু জনের সহজ ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তিকে পীড়া দেয় তাহাতে সংশয় নাই। ইউটিলিটির হিসাব ত্যাগ করিয়া এই ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তির উপর নির্ভর করিলে ধৰ্ম্মমীমাংস যদি সুকর হয়, তবে জীবহিংসা অধৰ্ম্ম । মাংস ভোজনে জীবহিংসার প্রশ্ৰয় দেয়, সুতরাং জীবহিংসা অধৰ্ম্ম । জীবের মাংস স্বস্বাদু ও পুষ্টিকর হইতে পারে ; তথাপি জীবহত্যা অধৰ্ম্ম । আমাদের হিন্দু সমাজের এ বিষয়ে মত-কি, তাহ বিবেচ্য। ‘অহিংসা পরম ধৰ্ম্ম’ এই মত এই দেশেই প্রচারিত হইয়াছিল; খ্ৰীষ্টানের দেশে নহে। ব্রাহ্মণ