পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ૨88 লাবণ্য অনেক আশ্বাস দিয়া কহিল, "আচ্ছা, তোকে সেজন্ত ভাবিতে হইবে না।” বক্সারে লাবণ্যর স্বামী নীলরতন কাজ করিতেন । শরতের অবসানে নবেন্দু লেখান হইতে লাবণ্যর নিমন্ত্রণ পাইলেন । আনন্দচিত্তে অনতিবিলম্বে গাড়ি চড়িয়া যাত্রা করিলেন। রেলে চড়িবার সময় তাহার বামাঙ্গ কাপিল না, কিন্তু তাহা হইতে কেবল এই প্রমাণ হয় যে, আসন্ন বিপদের সময় বামাঙ্গ কাপটি একটা অমূলক কুসংস্কারমাত্র । লাবণ্যলেখা পশ্চিম প্রদেশের নবশীতাগমসক্তৃত স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্ষের অরুণে পাণ্ডুরে পূর্ণপরিস্ফুট হইয়া নির্মল শরৎকালের নির্জন-নদীকূল-লালিত অম্লানপ্রফুল্লা কাশবনত্রীর মতো হাস্তে ও হিল্লোলে ঝলমল করিতেছিল । নবেন্দুর মুগ্ধ দৃষ্টির উপরে যেন একটি পূর্ণপুষ্পিত মালতীলতা নবপ্রভাতের শীতোজ্জল শিশিরকণা ঝলকে বালকে বর্ষণ করিতে লাগিল । মনের আনন্দে এবং পশ্চিমের হাওয়ায় নবেন্দুর অজীর্ণ রোগ দূর হইয়া গেল। স্বাস্থ্যের নেশায়, সৌন্দর্যের মোহে এবং শুালৗহস্তের শুশ্ৰষাপুলকে সে যেন মাটি ছাড়িয়া আকাশের উপর দিয়া চলিতে লাগিল । তাহীদের বাগানের সম্মুখ দিয়া পরিপূর্ণ গঙ্গা যেন তাহীরই মনের দুরন্ত পাগলামিকে আকণর দান করিয়া বিষম গোলমাল করিতে করিতে প্রবল আবেগে নিরুদ্দেশ হইয়া চলিয়া যাইত। ভোরের বেলা নদীতীরে বেড়াইয়া ফিরিবার সময় শীতপ্রভাতের স্নিগ্ধরৌদ্র যেন প্রিয়মিলনের উত্তাপের মতো তাহার সমস্ত শরীরকে চরিতার্থ করিয়া দিত। তাহার পর ফিরিয়া আসিয়া শু্যালীর শখের রন্ধনে জোগান দিবার ভার লইয়া নবেন্দুর অজ্ঞতা ও অনৈপুণ্য পদে পদে প্রকাশ পাইতে থাকিত। কিন্তু, অভ্যাস ও মনোযোগের দ্বারা উত্তরোত্তর তাহ সংশোধন করিয়া লইবার জন্ত মূঢ় অনভিঞ্জের কিছুমাত্র আগ্রহ দেখা গেল না ; কারণ, প্রত্যহ নিজেকে অপরাধী করিয়া সে যে-সকল তাড়না ভর্ৎসনা লাভ করিত তাহাতে কিছুতেই তাছার তৃপ্তির শেষ হইত না । যথাযথ পরিমাণে মালমসলা বিভাগ, উনান হষ্টতে হাড়ি তোলা-নামা, উত্তাপাধিক্যে ব্যঞ্জন পুড়িয়া না যায় তাহার যথোচিত ব্যবস্থা— ইত্যাদি বিষয়ে সে ষে সন্তোজাত শিশুর মতে অপটু অক্ষম এবং নিরুপায় ইহাই প্রত্যহ বলপূর্বক প্রমাণ করিয়া নবেন্দু খালীর রুপামিশ্রিত হান্ত এবং হাস্তমিশ্রিত লাঞ্ছনা মনের স্বখে ভোগ করিত। 疊 মধ্যtহ্নে এক দিকে ক্ষুধার তাড়ল অন্ত দিকে শুtলীর পীড়াপীড়ি, নিজের আগ্রহ