পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२० ३ রবীন্দ্র-রচনাবলী সম্ভব হয়, কিন্তু নিজের সঙ্গে তো দর-কষাকষি চলে না। এমন স্থলে অযাচিত দানে যাচিত দানের চেয়ে খরচ বেশি পড়িয়া যায়। তাহার পরে স্বামীর সোহাগের উপহার পাইয়া কিরণ যে কতখানি খুশি হইল তাহা ভালো করিয়া বুঝিবার জো নাই। এ সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে সে বলে— বেশ । ভালো । কিন্তু, বনোয়ারির মনের খটকা কিছুতেই মেটে না ; ক্ষণে ক্ষণে তাহার মনে হয়, হয়তো পছনা হয় নাই। কিরণ স্বামীকে ঈষৎ ভৎসনা করিয়া বলে, “তোমার ঐ স্বভাব ! কেন এমন খুংখুং করছ । কেন, এ তো বেশ হয়েছে।” বনোয়ারি পাঠ্যপুস্তকে পড়িয়াছে— সস্তোষগুণটি মামুষের মহৎ গুণ । কিন্তু, স্ত্রীর স্বভাবে এই মহৎ গুণটি তাহাকে পীড়া দেয়। তাহার স্ত্রী তো তাহাকে কেবলমাত্র সন্তুষ্ট করে নাই, অভিভূত করিয়াছে, সেও স্ত্রীকে অভিভূত করিতে চায় । তাহার স্ত্রীকে তো বিশেষ কোনো চেষ্টা করিতে হয় না— যৌবনের লাবণ্য আপনি উছলিয়া পড়ে, সেবার নৈপুণ্য আপনি প্রকাশ হইতে থাকে ; কিন্তু পুরুষের তো এমন সহজ স্থযোগ নয় ; পৌরুষের পরিচয় দিতে হইলে তাহাকে কিছু-একটা করিয়া তুলিতে হয়। তাহার যে বিশেষ একটা শক্তি আছে ইহা প্রমাণ করিতে না পারিলে পুরুষের ভালোবাসা মান হইয়া থাকে। আর-কিছু না-ও যদি থাকে, ধন যে একটা শক্তির নিদর্শন, ময়ুরের পুচ্ছের মতো স্ত্রীর কাছে সেই ধনের সমস্ত বর্ণচ্ছটা বিস্তার করিতে পারিলে তাহাতে মন সান্তুনা পায়। নীলকণ্ঠ বনোয়ারির প্রেমনাট্যলীলার এই আয়োজনটাতে বারম্বার ব্যাঘাত ঘটাইয়াছে। বনোয়ারি বাড়ির বড়োবাৰু, তবু কিছুতে তাহার কতৃত্ব নাই, কর্তার প্রশ্রয় পাইয়া ভূত্য হইয়া নীলকণ্ঠ তাহার উপরে আধিপত্য করে, ইহাতে বনোয়ারির যে অস্ববিধা ও অপমান সেটা আর-কিছুর জন্য তত নহে যতটা পঞ্চশরের তুণে মনের মতো শর জোগাইবার অক্ষমতাবশত । একদিন এই ধনসম্পদে তাহারই অবাধ অধিকার তো জন্মিবে । কিন্তু, যৌবন কি চিরদিন থাকিবে ? বসস্তের রঙিন পেয়ালায় তখন এ স্বধারস এমন করিয়া আপনআপনি ভরিয়া ভরিয়া উঠিবে না; টাকা তখন বিষয়ীর টাকা হইয়। খুব শক্ত হইয়া জমিবে, গিরিশিখরের তুষারসংঘাতের মতো ; তাহাতে কথায় কথায় অসাবধানের অপব্যয়ের ঢেউ খেলিতে থাকিবে F1 || টাকার नद्रकांद्र ८डॉ ७थंनझे, युधंन च्षांनcन्न डोंट् नग्न-छ्भ्र করিবার শক্তি নষ্ট হয় নাই । বনোয়ারির প্রধান শখ তিনটি— কুস্তি, শিকার এবং সংস্কৃতচর্চা। তাহার খাতার মধ্যে সংস্কৃত উদ্ভটকবিতা একেবারে বোঝাই করা। বাজলার দিনে, জ্যোংস্কারাত্রে, দক্ষিন হাওয়ায় সেগুলি বড়ো কাজে লাগে। স্ববিধা এই, নীলকণ্ঠ এই কবিতাগুলির